টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। শনিবার (৪ অক্টোবর) রাত থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টি ও ভূমিধসে বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলায় জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা।
অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে—এর মধ্যে মিরিকে ৭ জন এবং সুখিয়ায় ২ জন। প্রশাসন আশঙ্কা করছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে অবিরাম বৃষ্টি ও ধসে উত্তরবঙ্গের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ হয়ে পড়েছে। দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়িগামী জাতীয় সড়কসহ বিভিন্ন পাহাড়ি সড়কে ধস নেমে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ। ফলে দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক ও কার্শিয়াং–এর সঙ্গে শিলিগুড়ির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
শিলিগুড়ির কাছে দুধিয়া লোহার সেতু ভেঙে পড়ায় শিলিগুড়ি–মিরিক সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোহিণী সড়ক ও পুলবাজার সেতু—ফলে বিজনবাড়ি ও আশপাশের এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
অব্যাহত বর্ষণে তিস্তা, তোর্সা ও জলঢাকা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে। তিস্তা বাজার–রবিঝোড়ার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। ফলে বহু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় মাঠে নেমেছে রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা দল (এসডিআরএফ) ও জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দল (এনডিআরএফ)। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় উদ্ধার তৎপরতা বারবার ব্যাহত হচ্ছে। টাইগার হিল, রক গার্ডেন ও দার্জিলিংয়ের অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)। পর্যটকদের অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দার্জিলিং জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যটকদের দার্জিলিং–এ না আসার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
ভারী বর্ষণ ও ভুটান থেকে নেমে আসা পানিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জলপাইগুড়ি জেলা। নাগরাকোটা থানা চত্বরসহ ধূপগুড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকা হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে গেছে। অন্তত ৫০০টি বাড়ি পানির নিচে, ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।
জেলার পুলিশ সুপার উমেশখান্ড বাহালে জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবিলা দল, পুলিশ ও প্রশাসন একযোগে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ভুটান সরকারের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জরুরি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, সেখানকার ওয়াং নদীর টালা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে, ফলে বাঁধের দরজা খোলা যাচ্ছে না। এতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা ঘটলে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হতে পারে।
রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবং দুর্গত এলাকাগুলিতে মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল