সুপার টাইফুন রাগাসা দেশের উত্তরাঞ্চলে আছড়ে পড়ার পর ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থাকে পুরোপুরি সতর্কাবস্থায় থাকতে এবং সরকারের সব সংস্থাকে কাজে লাগাতে নির্দেশ দিয়েছেন। পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়াজুড়ে বিভিন্ন দেশও ঝড়ের সতর্কবার্তা জারি করেছে। ঘণ্টায় ২৩০ কিলোমিটার গতির দমকা হাওয়া নিয়ে কাগায়ান প্রদেশের পানুইতান দ্বীপে ৫ মাত্রার এ ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল স্থানীয় সময় বিকাল ৩টার দিকে আছড়ে পড়ে বলে জানিয়েছে বিবিসি। দমকা বাতাসে তিন মিটারের বেশি (নয় ফুট) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিপিন্সের আবহাওয়া দপ্তর। বাবুয়ান দ্বীপপুঞ্জে এখনো তীব্র ঝড়ের সংকেত বহাল রয়েছে। বাসিন্দাদের নদীতীর ও উপকূলীয় এলাকা থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ সংস্থাগুলোর দেওয়া একাধিক ভিডিও ক্লিপে কাগায়ান প্রদেশের উত্তরে তুমুল বাতাস ও ভারী বৃষ্টির তাণ্ডব দেখা গেছে, বড় বড় ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে, গাছগুলো জোরে জোরে দুলছে। ঝড়ের আগের বৃষ্টির তোড়ে সরকার ম্যানিলা শহর ও লুজনের বিশাল অংশজুড়ে সব কাজকর্ম ও পাঠদান স্থগিত ঘোষণা করেছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট, ভূমিধস, বিপজ্জনক সমুদ্র ও বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অন্তত দুই ডজন অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। বন্দরগুলোতে ফেরি যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে।
রাগাসা যদিও তাইওয়ানে আঘাত হানছে না, তবুও এর কারণে দ্বীপটির পূর্ব উপকূলে তুমুল বৃষ্টি ঝরবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তারা সমুদ্র ও স্থলে ঝড়ের সতর্কতা জারি করেছে, ১৪৬টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করেছে এবং পাহাড়ি দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলো থেকে প্রায় হাজারখানেক লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে। ভিয়েতনামের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বাহিনীগুলোকে ঝড়টি পর্যবেক্ষণে রাখতে দিনকয়েক পরে ঝড়টির সম্ভাব্য আছড়ে পড়া মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। চীন একাধিক দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ সচল করেছে, মঙ্গলবার রাত থেকে ওইসব এলাকায় তুমুল বৃষ্টি হতে পারে পূর্বাভাসে বলছে তারা। হংকং বলেছে, তাদের বিমানবন্দর এখনো খোলাই আছে, তবে এর কার্যক্রম সীমিত করে আনা হবে। আজ স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে কার্যক্রম অনেকটাই সীমিত থাকবে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কালকের ফ্লাইটগুলো। ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইনস জানিয়েছে, টাইফুনের কারণে তাদের প্রায় ৫০০ ফ্লাইট বাতিল করতে হচ্ছে। ম্যাকাও এবং ঝুহাই-ও প্রস্তুতি নিচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও নিচু এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। গতকাল সকালে হংকংয়ের বাসিন্দাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুত করতে দেখা গেছে। সুপার মার্কেটগুলোয় দেখা গেছে মানুষের দীর্ঘ সারি, অনেক জায়গায় এরই মধ্যে দুধের মতো পণ্য ফুরিয়ে গেছে, কাঁচা বাজারে কোথাও কোথাও সবজি বিক্রি হয়েছে অন্যান্য সময়ের তুলনায় তিন গুণ দামে, বলেছেন রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শীরা। -রয়টার্স