অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হাজার হাজার নতুন বসতি স্থাপনের পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
বৃহস্পতিবার মুখপাত্রের দপ্তর থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের অবস্থান স্পষ্ট- পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত শাসনব্যবস্থা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও বজায় রাখা হচ্ছে।’ এতে বলা হয়েছে, ‘এ ধরনের অবৈধ বসতি ‘দখলকে আরও শক্তিশালী করবে এবং উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে।’ বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এ ধরনের পদক্ষেপ ‘দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের অংশ হিসেবে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের কার্যকারিতাকে পদ্ধতিগতভাবে ক্ষয় করবে’। উত্তর এবং দক্ষিণ পশ্চিম তীরকে বিচ্ছিন্ন করবে, একটি কার্যকর, সংলগ্ন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র বাস্তবায়নের সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’ গুতেরেস ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এ প্রক্রিয়ার অগ্রগতি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তিনি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে তার বাধ্যবাধকতা অনুসারে এবং ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের পরামর্শমূলক মতামতে পুনর্ব্যক্ত করে ইসরায়েল সরকারের প্রতি সব বসতি স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’ এর আগে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ জেরুজালেমের পূর্বে মা’আলে আদুমিমে ৩ হাজার ৪০১টি বসতি স্থাপনকারী ইউনিট এবং আশপাশের এলাকায় আরও ৩ হাজার ৫১৫টি বসতি স্থাপনকারী ইউনিট নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছেন। এ প্রকল্পের লক্ষ্য পশ্চিম তীরকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা, এর উত্তর ও দক্ষিণ শহরগুলোর মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং পূর্ব জেরুজালেমকে বিচ্ছিন্ন করা। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরায়েল’-এর দৃষ্টিভঙ্গির অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করে দিয়েছে, এটি দখলদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করবে এবং একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের কার্যকারিতা নষ্ট করবে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকে অবৈধ বলে মনে করে।
এদিকে জার্মানি গতকাল ইসরায়েল সরকারকে পশ্চিম তীরে নতুন বসতি নির্মাণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এর আগে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ ঘোষণা দেন, দীর্ঘদিন ধরে বিলম্বিত একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হবে, যেখানে হাজারো নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হবে।
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ইসরায়েলের এ সিদ্ধান্তের ফলে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে এবং পূর্ব জেরুজালেমের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। বিশেষভাবে ‘ই-ওয়ান’ নামে পরিচিত এ বসতি সম্প্রসারণ ফিলিস্তিনিদের চলাচলের স্বাধীনতা আরও সীমিত করবে। স্মোটরিচের দপ্তর জানায়, নতুন পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের একটি বিদ্যমান বসতি ও জেরুজালেমের মাঝখানে ৩ হাজার ৪০১টি বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দাবি, এ পরিকল্পনা কার্যকর হলে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণা চিরতরে শেষ হয়ে যাবে। জার্মানি বহুবার ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে, পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের পরিপন্থি। -আনাদোলু এজেন্সি
বার্লিনের মতে এমন পদক্ষেপ শান্তি আলোচনায় দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথ জটিল করে তুলবে এবং পশ্চিম তীরের ওপর ইসরায়েলি দখলদারি দীর্ঘস্থায়ী করবে।