মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়াকে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরির অনুমোদন দিয়েছেন। গতকাল বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং–এর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ অনুমোদন দেন ট্রাম্প। এশিয়া–প্যাসিফিক ইকোনমিক কো–অপারেশন (এপেক) ফোরামের শীর্ষ সম্মেলনের আগে দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে দুই নেতার মধ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের এক উপদেষ্টা জানান, বিনিয়োগ ও জাহাজ নির্মাণ–সংক্রান্ত একটি বড় চুক্তিতে দুই দেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ট্রাম্পও বলেছেন, চুক্তিটি ‘প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে’।
আজ বৃহস্পতিবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল–এ ট্রাম্প লেখেন, “আমি তাদের এখনকার ডিজেলচালিত, সেকেলে, ধীরগতির সাবমেরিনের পরিবর্তে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরির অনুমোদন দিয়েছি।”
আরেক পোস্টে তিনি যোগ করেন, “দক্ষিণ কোরিয়া তাদের পারমাণবিক সাবমেরিন তৈরি করবে ফিলাডেলফিয়া শিপইয়ার্ডে, আমাদের প্রিয় আমেরিকায়।” তিনি আরও দাবি করেন, “আমাদের দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিশাল পুনর্জাগরণ ঘটছে।”
দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের অন্যতম উন্নত জাহাজ নির্মাণশিল্পের অধিকারী হলেও, পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রপালশন প্রযুক্তি কোথা থেকে আসবে, সে বিষয়ে ট্রাম্প কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যৌথভাবে ‘অকাস’ (AUKUS) প্রকল্পে কাজ করছে। এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া পারমাণবিক সাবমেরিন পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কেবল যুক্তরাজ্যের সঙ্গেই এই প্রযুক্তি ভাগ করেছে—তাও ১৯৫০–এর দশকে।
গতকাল প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং ট্রাম্পকে পারমাণবিক সাবমেরিনের জন্য জ্বালানি সরবরাহ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ জানান।
লি বলেন, “আমরা পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত সাবমেরিন চাই না। তবে ডিজেলচালিত সাবমেরিনের পানির নিচে স্থায়িত্ব সীমিত, যা আমাদের উত্তর কোরিয়া ও চীনের সাবমেরিনগুলোকে অনুসরণ করার সক্ষমতাকে ব্যাহত করে।”
এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার একাধিক প্রেসিডেন্টও পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরির আগ্রহ দেখালেও যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই এর বিরোধিতা করে এসেছে।
সিউলের প্রেসিডেন্সিয়াল অফিস জানিয়েছে, ট্রাম্পের জন্য আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজের ডেজার্টে লেখা ছিল ‘PEACE!’ (শান্তি!)। এটি দুই নেতার প্রথম বৈঠকের প্রতীক, যেখানে তাঁরা কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি রক্ষার অঙ্গীকার করেছিলেন।
পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করায় অঞ্চলে উত্তেজনা তুঙ্গে। ট্রাম্প জানান, দক্ষিণ কোরিয়া সফরের সময় তিনি কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক আয়োজন করতে পারেননি, ফলে দীর্ঘ কূটনৈতিক স্থবিরতার পর সম্ভাব্য শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে চলা জল্পনার অবসান ঘটেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবল বলেন, “দক্ষিণ কোরিয়া এ ধরনের সাবমেরিন তৈরি করলে বিভিন্ন প্রশ্নের উদ্রেক হবে। অকাস চুক্তির মতো তারাও যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রপালশন প্রযুক্তি ও জ্বালানি আশা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের সাবমেরিনে সাধারণত উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহৃত হয়, যার জন্য আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)–এর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন।”
কিমবল সতর্ক করে বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে, তবে মিত্রদের এই ধরনের দ্বৈত–ব্যবহারের প্রযুক্তি হস্তান্তরের অনুরোধ দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করা উচিত।”
সূত্র: সিএনএন
বিডি প্রতিদিন/আশিক