ন্যাটো সামরিক জোটের পূর্ব সীমান্ত থেকে কিছু সেনা প্রত্যাহার করার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। যার মধ্যে রোমানিয়ার মিহাইল কোগালনিচিয়ানো বিমান ঘাঁটিতে মোতায়েন থাকার কথা ছিল এমন সেনারাও রয়েছে। বুধবার রোমানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।
রোমানিয়ার মন্ত্রণালয়টি বলেছে, ওয়াশিংটনের কৌশলগত অগ্রাধিকারের পরিবর্তনের কারণে এই সিদ্ধান্তটি প্রত্যাশিতই ছিল। তবে প্রায় হাজার মার্কিন সেনা রোমানিয়ায় মোতায়েন থাকবে। এক মাস আগে এক হাজার থেকে ১২শ' মার্কিন সেনা পালাক্রমে বেরিয়ে যায় এবং তাদের জায়গায় নতুন কোনো সেনা পাঠানো হবে না বলে জানানো হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপীয় মিত্রদের বলে আসছে, যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু নিজস্ব সীমান্ত এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বেশি মনোযোগ দিতে চাইছে, তাই ইউরোপীয় দেশগুলোকে তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে।
রোমানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আমেরিকান সিদ্ধান্তটি হলো একটি ব্রিগেডের ইউরোপে পালাক্রমে অবস্থান বন্ধ করা, যার কিছু সেনা ন্যাটোর বিভিন্ন দেশে ছিল। এই ব্রিগেডের সেনারা রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়ায় মোতায়েন ছিল।
রোমানিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়নুত মোস্তেআনু একটি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, বুখারেস্টের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক এখনও মজবুত আছে এবং মার্কিন সেনাসহ মোট প্রায় ৩৫শ' ন্যাটো সেনার স্থায়ী উপস্থিতি এখনও বিবেচনাযোগ্য।
মোস্তেআনু বলেন, এটি আমাদের প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট। তিনি আরও যোগ করেন, আমাদের রক্ষা করার জন্য এখানে পুরো বিদেশি সেনাবাহিনী থাকবে, এই প্রত্যাশা অবাস্তব। আমরা রোমানিয়ার সেনাবাহিনীতে বিনিয়োগ চালিয়ে যাব। তিনি জানান, রোমানিয়া উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পেয়েছে, যা ড্রোন অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে দেশের সক্ষমতাকে বাড়াবে।
যদিও মার্কিন সামরিক বাহিনী বলেছে, এই সিদ্ধান্ত ইউরোপ থেকে আমেরিকান প্রত্যাহার বা ন্যাটোর প্রতি দায়বদ্ধতা হ্রাসের কোনো ইঙ্গিত নয়। তবুও শক্তিশালী রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন। সিনেট ও হাউসের সশস্ত্র পরিষেবা কমিটির শীর্ষ রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, রোমানিয়ায় পালাক্রমে আসা মার্কিন ব্রিগেডকে আর না রাখার সিদ্ধান্তের আমরা তীব্র বিরোধিতা করছি।
অন্যদিকে, ন্যাটোর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে এই সেনা মোতায়েন নিয়ে জোট ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে এবং মার্কিন মোতায়েনে এই ধরনের সমন্বয় অস্বাভাবিক নয়। স্লোভাকিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র রোমানিয়াকে প্রভাবিত করছে। ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুয়িডো ক্রোসেটো উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ সরানোর প্রক্রিয়াটি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় থেকেই শুরু হয়েছিল এবং এখন ইউরোপকে নিজেদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
ইউক্রেনের সঙ্গে রোমানিয়ার ৬৫০ কিমি (৪০০ মাইল) স্থল সীমান্ত রয়েছে এবং গত দুই বছরে ২০ বারেরও বেশি রাশিয়ান ড্রোন তার আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে, যা এই অঞ্চলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তবে, পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা জানিয়েছেন, তাদের ভূখণ্ডে মার্কিন সেনা কমানোর বিষয়ে কোনো তথ্য তারা পাননি।
সূত্র: রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল