ক্ষুধা লেগেছে, কিন্তু পকেটে পয়সা নেই? দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই! আশপাশে পড়ে থাকা বর্জ্য কুড়িয়ে এনে জমা দিলেই মিলবে ভাত, রুটি, ডাল, শিঙাড়া, সমুচাসহ বিভিন্ন খাবার। তবে হ্যাঁ, সেই বর্জ্য হতে হবে অবশ্যই প্লাস্টিকের। ভারতের বিভিন্ন শহরে গড়ে উঠেছে এমন ব্যতিক্রমধর্মী ‘গার্বেজ ক্যাফে’ (আবর্জনার রেস্তোরাঁ)। উদ্যোগটি নিয়ে প্রথম দিকে অনেকে হাসাহাসি করলেও বিষয়টি এখন বেশ প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এতে একদিকে পরিবেশের জন্য হুমকি প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে মুক্তি পাচ্ছে প্রাণ-প্রকৃতি, আবার ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইয়েও নতুন উপায় যোগ হয়েছে।
মধ্য ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের আম্বিকাপুর শহরে ২০১৯ সালে চালু হয় এই গার্বেজ ক্যাফে। স্লোগান ছিল-‘অধিক বর্জ্য, উন্নত স্বাদ’। অর্থাৎ, যে যত বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য দিতে পারবে, সে পাবে তত বেশি মজার মজার খাবার। পৌর করপোরেশনের স্বাস্থ্যবাজেট থেকে অর্থায়ন করে এটি চালু করা হয় শহরের প্রধান বাসস্ট্যান্ডের কাছে। আম্বিকাপুর পৌর করপোরেশনের (এএমসি) হয়ে ক্যাফেটি চালান বিনোদ কুমার প্যাটেল। তিনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য আর ক্ষুধা ছিল আম্বিকাপুরের দুটি বড় সমস্যা। আমাদের ধারণা ছিল সহজ। দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে গৃহহীন আর র্যাগপিকারদের (বর্জ্যকুড়ানি) রাস্তাঘাট ও ল্যান্ডফিল থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহে উৎসাহিত করা এবং বিনিময়ে তাদের গরম খাবার দেওয়া। তিনি জানান, এক কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য দিলে পাওয়া যাবে ভাত, ডাল, দুই রকম সবজি, রুটি, সালাদ, আচারসহ পুরো খাবার। আর আধা কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য দিলে মিলবে সকালের নাশতা।
প্রতিদিন আম্বিকাপুরের এই গার্বেজ ক্যাফেতে বর্জ্য হাতে ভিড় করেন অনেক ক্ষুধার্ত মানুষ। প্লাস্টিকের পুরনো ব্যাগ, পলিথিন, খাবারের মোড়ক, পানির বোতল, চিপসের প্যাকেট দিয়েই পেয়ে যান গরম গরম খাবার।
পৌর করপোরেশনের এমন উদ্যোগে এখন আর রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে যেতে হয় না কোনো পথশিশুকে। সেই সঙ্গে শহরটিও থাকছে পরিষ্কার। আবর্জনা কুড়িয়ে যারা সংসার চালান, তারাও খুশি। তারা বলছেন, আগে বর্জ্য কুড়িয়ে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করলে প্রতি কেজিতে মিলত ১০ রুপি। তা দিয়ে সংসার চালানো ছিল কঠিন। এখন একদিকে বর্জ্য দিয়ে বেশি খাবার মিলছে, আবার রান্নার ঝামেলা নিতে হচ্ছে না।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে গার্বেজ ক্যাফে চালুর পর শহরের ল্যান্ডফিলে যাওয়া প্লাস্টিকের পরিমাণ অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। এ উদ্যোগের ফলে আম্বিকাপুর ভারতের অন্যতম পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
প্লাস্টিক দূষণ বাংলাদেশেরও অন্যতম পরিবেশ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও প্লাস্টিক দূষণের কলেবর প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে একবার ব্যবহার্য পলিথিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তবে বছর ঘুরলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মতো দেশের সব স্থানীয় সরকার ইউনিটগুলো ভর্তুকি দিয়ে হলেও এমন গার্বেজ ক্যাফে চালু করলে প্লাস্টিক দূষণ রোধে বড় ভূমিকা রাখত বলে মনে করছেন অনেকে।