২০২৫-২৬ মৌসুমের ঘরোয়া ফুটবলের পর্দা উঠছে আজ। চ্যালেঞ্জ কাপের মাধ্যমে নতুনের যাত্রা। পেশাদার লিগ চ্যাম্পিয়ন ঢাকা মোহামেডান ও ফেডারেশন কাপ বিজয়ী বসুন্ধরা কিংস শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে। গত মৌসুমে চ্যালেঞ্জ কাপের শুরু। বসুন্ধরা কিংস ৩-১ গোলে মোহামেডানকে হারিয়ে প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবারও দুই দল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে। কে হবে চ্যাম্পিয়ন? কিংস কি টানা দ্বিতীয় না ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাসে নতুন ট্রফি জিতবে? পেশাদার লিগ কমিটির নিয়ম অনুযায়ী যারা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়, তাদের হোম ভেন্যুতেই চ্যালেঞ্জ কাপ হয়। সে হিসেবে গত বছর এক ম্যাচের শিরোপার লড়াইটি হয়েছিল কিংস অ্যারিনায়। এবার মোহামেডানের হোম ভেন্যু কুমিল্লা ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে খেলা। বেলা আড়াইটায় ম্যাচটি শুরু হবে। কুমিল্লা স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট নেই বলে দিনের আলোয় ম্যাচটি হবে। নির্ধারিত সময়ে ফল নিষ্পত্তি না হলে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট খেলা। এর পরও ড্র থাকলে টাইব্রেকারে শিরোপা নির্ধারিত হবে।
কুমিল্লায় পেশাদার লিগ নিয়মিত হচ্ছে। ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপের ফাইনালও অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ আবার চ্যালেঞ্জ কাপের ফাইনাল। সব মিলিয়ে ফুটবলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এ ভেন্যু। দেশের দুই সেরা দল মোহামেডান ও বসুন্ধরা কিংসের শিরোপার ম্যাচ। কুমিল্লায় আজকের লড়াইটি উপভোগ্য হয়ে উঠবে বলে ফুটবল বিশ্লেষকদের ধারণা। তবে মাঠ কতটা উপযোগী থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিতে যে অবস্থা তাতে ফুটবলাররা স্বাভাবিক নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে পারবেন কি না সংশয় রয়েছে। আজ বৃষ্টি হলে তো চিন্তা বাড়বে। এখানে পানিনিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থাও নেই।
ফাইনাল ফাইনালই। এখানে ফেবারিট বা পরিসংখ্যান সেভাবে কাজে আসে না। তারপর আবার ম্যাচটি কিংস ও মোহামেডানের। শিরোপা কে জিতবে আগাম বলাটা মুশকিল। তবে শক্তির পার্থক্য করলে বসুন্ধরা কিংসকে এগিয়ে রাখা যায়। সত্যি বলতে কি দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে বসুন্ধরা যে মানের দল তাতে সহজ জয় পেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আক্রমণভাগে ডরিয়েলটন, এমানুয়েল সানডের সঙ্গে রাকিব। এ তিনজন কতটা যে ভয়ংকর তা এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে প্রমাণ মিলেছে। সিরিয়ার আল-কারামাহর রক্ষণভাগ ভেঙে তছনছ করে দিয়েছিলেন। সানডে যে গোলে জয় পেয়েছিল কিংস তা চোখে ধরে রাখার মতো। মধ্যমাঠে দুই সোহেল রানা, ফাহিম, হৃদয়, রাফায়েল। তপু বর্মণ, তারিক কাজী, সাদউদ্দিন বা তাজউদ্দিনকে দিয়ে দেশের সেরা রক্ষণ সাজানো। এক ম্যাচে তিন বিদেশি খেলতে পারবে। সে হিসেবে এমানুয়েল টনির না খেলার সম্ভাবনা বেশি। মধ্যমাঠে যদি কিউবা মিচেল পুরো সময়ে খেলেন তা হবে কিংসের বাড়তি সুবিধা। আর্জেন্টাইন কোচ মারিও গোমেজের আজই কিংসে অভিষেক। এত সেরার মাঝে তিনি কীভাবে আজ বেস্ট ইলেভেন সাজাবেন তা-ই দেখার বিষয়।
শক্তির বিচারে কিংস এগিয়ে, এ নিয়ে সংশয় নেই। তবে তাদের চিন্তা প্রতিপক্ষ মোহামেডান বলেই। পেশাদার লিগে অভিষেকের পর কিংস সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হেরেছে মোহামেডানের কাছে। লিগে তিন ও ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে মোহামেডান জয় পেয়েছিল। কিংস অ্যারিনায় কিংস প্রথম ম্যাচ হেরেছিল মোহামেডানের কাছে। গত লিগে তো দুই পর্বেই হার। তাই কিংস আজ মোহামেডানের বিপক্ষে খেলবে সতর্ক হয়ে। সাদা-কালোদের লোকাল সাইড আগের চেয়ে শক্তিশালী বলা যায়। টানা চার মৌসুম মালির ফুটবলার সুলেমান দিয়াবাতে দলটিকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর এবার অধিনায়ক হয়েছেন মেহেদী হাসান। নতুন যোগ দিয়েছেন রহমত মিয়া, সেই সঙ্গে পুরোনো রাজীব, শাকিল আহমেদ তপু, মিনহাজ আবেদীন গত মৌসুমে দেখার মতো পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন।
আক্রমণভাগে সুমন রেজা নতুন যোগ দিয়েছেন। প্রীতি ম্যাচে গোলও করেছেন। আছেন উজবেকিস্তানের মোজাফফরভ। গতবারের সর্বোচ্চ গোলদাতা স্যামুয়েল বোয়াটেং এবার মোহামেডানে। ঘানার দুই ফুটবলার বার্নার্ড মরিস মিরসন, এমানুয়েল এলি যোগ দিয়েছেন। মোজাফফরভ, স্যামুয়েল বেস্ট ইলেভেলে থাকবেন নিশ্চিত। এক আফ্রিকাকে সাইড বেঞ্চে থাকতে হবে। সব মিলিয়ে মোহামেডানকেও শক্তিশালী বলা যায়। তবে গত লিগে চ্যাম্পিয়নের পেছনে দিয়াবাতে ও সানডের বড় অবদান ছিল। এঁরা এবার নেই, তাঁদের শূন্যস্থান পূরণ করা সম্ভব হবে কি আজকের ফাইনালে? সানডে তো খেলবেন কিংসে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে অভিষেকের পর বসুন্ধরা কিংস লিগ পাঁচ, ফেডারেশন কাপ চার, স্বাধীনতা কাপ তিন ও চ্যালেঞ্জ কাপে একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আজই কি তাহলে ১৪তম ট্রফির তালিকায় নাম লেখাবে তারা? নাকি মোহামেডান শিরোপার খাতায় নতুন ট্রফির নাম তুলবে?
অন্যদিকে মোহামেডানের লিগ, পাকিস্তান আমলে স্বাধীনতা কাপ, আগা খান গোল্ডকাপ, বাংলাদেশে স্বাধীনতা কাপ, ফেডারেশন কাপ, ডামফা কাপ, মা-মণি গোল্ডকাপ, জাতীয় লিগ ও সুপার কাপে একাধিকবার শিরোপা জয়ের রেকর্ড রয়েছে। আজ কি তারা পারবে তালিকায় নতুন ট্রফির নাম যোগ করতে?