মানুষের পূর্বপুরুষদের মধ্যে অ্যালকোহলের প্রতি আকর্ষণ কেন তৈরি হয়েছিল, এ নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
এই গবেষণায় জানা গেছে, বুনো শিম্পাঞ্জিরা প্রতিদিন পাকা ফল থেকে বিয়ারের বোতলে থাকা অ্যালকোহলের সমান পরিমাণ অ্যালকোহল গ্রহণ করছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গবেষণা প্রমাণ করে যে মানুষের অ্যালকোহলের প্রতি আসক্তি মানুষের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে এসেছে। সেই পূর্বপুরুষরা সম্ভবত গাঁজানো ফল খেতেন, যা তাদের জন্য শর্করা এবং অ্যালকোহলের উৎস ছিল।
গবেষণার প্রধান গবেষক ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলেক্সি মারো বলেন, মানুষের মধ্যে অ্যালকোহলের প্রতি যে আকর্ষণ, তা সম্ভবত শিম্পাঞ্জিদের সাথে আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষদের খাদ্যাভ্যাস থেকে এসেছে।
বুনো শিম্পাঞ্জিরা এবং অন্যান্য অনেক প্রাণী বনভূমিতে পড়ে থাকা পাকা ফল খেতে দেখা যায়। তবে এই প্রথম কোনো গবেষণায় সুনির্দিষ্টভাবে দেখানো হলো যে তারা ঠিক কতটা অ্যালকোহল গ্রহণ করে।
গবেষক দল কোট ডি’আইভরি এবং উগান্ডার বুনো শিম্পাঞ্জিদের খাওয়া ডুমুর ও পামের মতো ফলে ইথানল বা বিশুদ্ধ অ্যালকোহলের পরিমাণ পরিমাপ করেন। তারা দেখতে পান, শিম্পাঞ্জিরা সাধারণত যে পরিমাণ ফল খায়, তাতে তারা প্রায় ১৪ গ্রাম ইথানল গ্রহণ করে। যা একটি ৩৩০ মিলিলিটার বিয়ারের বোতলে থাকা অ্যালকোহলের সমান। মজার বিষয় হলো, তারা সবচেয়ে বেশি খেত সেই ফলগুলো, যেগুলোতে অ্যালকোহলের মাত্রা সবচেয়ে বেশি ছিল।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক গবেষক অধ্যাপক রবার্ট ড্যাডলি প্রথমে মাতাল বানর নামে একটি তত্ত্ব দেন। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষের মধ্যে অ্যালকোহলের প্রতি আকর্ষণ আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে এসেছে। এই নতুন গবেষণা সেই তত্ত্বকে আরও জোরালো করেছে।
এই গবেষণার সাথে যুক্ত সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাইমাটোলজিস্ট ক্যাথরিন হোবাইটার বিবিসি নিউজকে জানান, বিজ্ঞানীরা প্রথমে এই তত্ত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও পর্যবেক্ষণের পর তারা বুঝতে পারছেন, অ্যালকোহলের সাথে আমাদের সম্পর্ক প্রায় ৩০ মিলিয়ন বছর আগে থেকেই।
প্রফেসর হোবাইটার বলেন, হয়তো শিম্পাঞ্জিদের জন্য এটি সামাজিক সম্পর্ক গড়ার একটি দারুণ উপায়। তারা দল বেঁধে বনের মেঝেতে পড়ে থাকা ফলগুলো খেতে পছন্দ করে।
তবে ইউনিভার্সিটি অফ এক্সেটারের গবেষক ড. কিম্বারলি হকিংস বলেন, এই গবেষণায় শিম্পাঞ্জিরা মাতাল হওয়ার মতো পর্যাপ্ত অ্যালকোহল গ্রহণ করেনি। কারণ অতিরিক্ত অ্যালকোহল তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমিয়ে দিত।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অফ নেচার অনুযায়ী, শিম্পাঞ্জিরা বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রয়েছে। বনভূমি ধ্বংস, কৃষিজমি তৈরি, গাছ কাটা, রাস্তা ও শহর নির্মাণের কারণে তাদের বাসস্থান মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে।
এই গবেষণাটি 'সায়েন্স অ্যাডভান্সেস' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল