মহাকাশের এক নতুন এবং চমকপ্রদ তথ্য নিয়ে আলোচনায় মেতেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ, যা আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, তা নাকি ধীরে ধীরে আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই দূরত্ব বাড়ছে প্রতি বছর প্রায় দেড় ইঞ্চি করে। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও লেজার রশ্মির সাহায্যে সূক্ষ্ম পরিমাপ করে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এর নেপথ্যে রয়েছে এক অদ্ভুত টানাপোড়েন। পৃথিবী এবং চাঁদের মধ্যকার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আমাদের সমুদ্রে জোয়ার-ভাটা তৈরি করে। চাঁদের টানে যখন সমুদ্রের জল ফুলে ওঠে, সেই জলরাশি পাল্টা একটি শক্তি প্রয়োগ করে চাঁদের ওপর। এই শক্তি চাঁদকে তার কক্ষপথে আরও গতিশীল করে তোলে। আর চাঁদের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার কক্ষপথও দীর্ঘতর হয়। ফলস্বরূপ, পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে আশ্বস্ত করে বলছেন, এখনই চিন্তার কোনো কারণ নেই। যে হারে এই দূরত্ব বাড়ছে, তা অত্যন্ত সামান্য। প্রতি বছর ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার কিলোমিটার গড় দূরত্বের তুলনায় দেড় ইঞ্চির এই বৃদ্ধি মাত্র ০.০০০০০০১ শতাংশ। তাই আগামী কয়েক লক্ষ বছরেও পৃথিবী বা চাঁদের সম্পর্কে কোনো বড় পরিবর্তন আসবে না।
তবে এই দূরত্বের বৃদ্ধির একটি পরোক্ষ প্রভাবও রয়েছে। চাঁদ দূরে সরে যাওয়ার পাশাপাশি, পৃথিবীর নিজের অক্ষের ওপর ঘোরার গতিও খুব সামান্য পরিমাণে কমে যাচ্ছে। এর ফলে দিনের দৈর্ঘ্য সামান্য বাড়ছে। কিন্তু এই পরিবর্তন এতটাই ধীর যে তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, প্রায় সাড়ে চারশো কোটি বছর আগে মঙ্গল গ্রহের আকারের একটি মহাজাগতিক বস্তুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষের ফলে চাঁদের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময় চাঁদ পৃথিবীর অনেক কাছে ছিল এবং দিনের দৈর্ঘ্যও ছিল কম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদ দূরে সরে গেছে এবং দিনের দৈর্ঘ্যও বেড়েছে।
ভবিষ্যতে চাঁদ পৃথিবী থেকে অনেক দূরে সরে যাওয়ার আগেই সূর্যের আয়ু ফুরিয়ে যাবে। আমাদের সূর্য তখন একটি দানবীয় লাল নক্ষত্রে পরিণত হবে এবং তার তাপে পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্র শুকিয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত, চাঁদ এবং পৃথিবী উভয়কেই সূর্য গ্রাস করে নেবে। তাই আপাতত আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। চাঁদের এই আপাত বিদায় এক সুদূর ভবিষ্যতের গল্প, যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আমাদের এই মহাজাগতিক প্রতিবেশী ধীরে ধীরে সরে গেলেও তার সৌন্দর্যে কোনো পরিবর্তন আসবে না। চাঁদ যেমন ছিল, তেমনই থাকবে, কেবল দূর থেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল