ম্যাচ শেষ ওভারে গড়ায়নি। যদিও সম্ভাবনা ছিল। জিততে সময়ক্ষেপণ করেননি চারিথ আসালাঙ্কা। ১৯তম ওভারের শেষ বলে তানজিম সাকিবকে লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে জয় নিশ্চিত করেন। ৬ বল আগে ৭ উইকেটের বড় জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। লিটন দাসের নেতৃত্বে টানা ষষ্ঠ ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের মতো পাল্লেকেলেতে প্রথম টি-২০ ম্যাচেও বিবর্ণ পারফরম্যান্স টাইগারদের। রবিবার ডাম্বুলায় সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচ। ম্যাচ শেষে মিডিয়ার মুখোমুখিতে হারের জন্য দোষারোপ করেন ব্যাটারদের দায়িত্ব নিয়ে বড় ইনিংস খেলতে না পারার ব্যর্থতাকে, ‘ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেট ভালো ছিল। যদিও কিছু বল নিচু হয়েছে। তারপরও বলব, যারা ভালো ব্যাটিং করেছেন, তারা দাযিত্ব নিয়ে ইনিংসগুলোকে বড় করতে পারেননি। এ উইকেটে রান তাড়া করা অপেক্ষাকৃত সহজ। আমাদের বোলিং বিভাগ ভালো। কিন্তু আমরা ভালো বোলিং করতে পারিনি। মনে রাখতে হবে প্রতিটি ক্রিকেটারেই বাজে সময় যায়। তার মধ্যেও রিশাদ হোসেন ভালো বোলিং করেছেন। এ ধরনের উইকেটে আপনাকে সাফল্য পেতে ভালো জায়গায় বোলিং করতে হবে। তবে ব্যাটারদের উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া অনেক কঠিন।’
টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে পারফরম্যান্সের কাটাছেঁড়া শেষে দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার সংকটের কথা বলেছিলেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ লিপু, ‘আমাদের হাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো খেলোয়াড়ের সংকট আছে। ৩০ খেলোয়াড়কে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে সবকিছু। আশা করি ‘এ’ দল, এইচপি থেকে খেলোয়াড় উঠে আসবে।’ সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান ক্রিকেটারদের মানসিক ফিটনেস নেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যাটারদের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে স্বাভাবিক যে ক্রিকেট আমরা ঢাকা লিগে খেলি বা এখানে খেলি, সেটা খেলছে না। হয়তো ওভার কনসাস (অতিরিক্ত সতর্কতা)। আমার কাছে মনে হচ্ছে না যে, তারা মানসিকভাবে ফিট। হয়তো অনেক চাপ নিয়ে নিচ্ছে।’ পাল্লেকেলেতে বড় ব্যবধানে ম্যাচ হারের পর অধিনায়ক লিটনের বক্তব্য পরোক্ষ সমর্থন জানিয়েছে প্রধান নির্বাচক ও সাবেক অধিনায়কের মন্তব্যকে। ২০১৭ সালের পর শ্রীলঙ্কা সফরে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলছেন টাইগাররা। টেস্ট সিরিজ হেরেছে ১-০ ও ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে ২-১ ব্যবধানে। দুটি সিরিজ হারলেও টি-২০ ফরম্যাটে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখেছিল। ২০১৩ সালের পর পাল্লেকেলেতে প্রথমবার টি-২০ খেলতে নেমেছিল সেই স্বপ্ন নিয়ে। টস হেরে ব্যাটিংয়ে দুই ওপেনার তানজিদ তামিম ও পারভেজ হোসেন ইমন ৫ ওভারের ৪৬ রানের ভিত দিলে মনে হয়েছিল বড় স্কোর হবে। কিন্তু কোনো ব্যাটারই পঞ্চাশ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেননি। তানজিদ আউট হন ১৭ বলে ১৬ রানে। টি-২০ স্ট্রাইলের ব্যাটিংয়ে পারভেজ ইমন ২২ বলে ৫ চার ও এক ছক্কায় ৩৮ রান করেন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ৩৫ মাস পরে খেলতে নেমে নাঈম শেখ ২৯ বলে ৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ঠিকই, কিন্তু চাপমুক্ত ব্যাটিং করেননি। মেহেদি হাসান মিরাজ ২৩ বলে ২৯ রান করেও থমকে যান। ম্যাচ হারের পর ইনিংসগুলোকে বড় না করার আক্ষেপই পুড়িয়েছে টাইগার অধিনায়ককে। যদিও তিনি ৬ রানের বেশি করতে পারেননি।
১৫৫ রানের টার্গেটে স্বাগতিক দুই ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও ম্যাচসেরা কুশল মেন্ডিস ৪.৪ ওভারে ৭৮ রানের ভিত দেন। নিশাঙ্কা ১৬ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৪২ রান করলেও কুশল ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন ৫১ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায়। দুজনের চার-ছক্কার ঝড়ে নাভিশ্বাস উঠেছে টাইগার বোলারদের। লঙ্কান ব্যাটাররা এতটাই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন যে, চার মেরেছেন ১২টি ও ছক্কা ৮টি। টাইগার ব্যাটাররা চার মারেন ১২টি ও ছক্কা ৪টি। বোলিংয়ে ১৪ মাস পর খেলে ১ উইকেট নেন সাইফুদ্দিন। দুই স্পিনার মিরাজ ও রিশাদ একটি করে উইকেট নেন।
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৫৪/৫ (পারভেজ ৩৮, নাঈম ৩২*, মিরাজ ২৯, শামীম ১৪*; কারুণারত্নে ১-০-৮-০, থুশারা ৪-০-৩২-১, বিনুরা ৩-০-২২-০, থিকশানা ৪-০-৩৭-২, শানাকা ৪-০-২২-১, ভ্যান্ডারসে ৪-০-২৫-১)
শ্রীলঙ্কা : ১৯ ওভারে ১৫৯/৩ (নিশাঙ্কা ৪২, কুশল মেন্ডিস ৭৩, কুশল পেরেরা ২৪, আভিশকা ১১*, আসালাঙ্কা ৮*; সাইফুদ্দিন ৩-০-২২-১, তাসকিন ৩-০-৪৩-০, তানজিম ৪-০-৩৪-০, মিরাজ ৪-০-২৪-১, শামীম ১-০-১১-০, রিশাদ ৪-০-২৪-১)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে শ্রীলঙ্কা ১-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: কুসাল মেন্ডিস