২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল। সারা দেশ থেকে অংশ নেওয়া ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। অকৃতকার্য (ফেল) হয়েছে ৬ লাখ ৬৬০ জন শিক্ষার্থী (৩১ দশমিক ৫৫ শতাংশ)। পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন।
গত বছর সারা দেশে ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছিল ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। গত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। জিপিএ ৫ কমেছে ৪৩ হাজার ৯৭ জনের। গতকাল দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার সভাকক্ষে ফল প্রকাশ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করে শিক্ষা বোর্ডগুলো। সেখানেই ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। ফল প্রকাশে ছিল না বাড়তি কোনো আনুষ্ঠানিকতা। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক দশকের মধ্যে এসএসসিতে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে শিক্ষার্থীরা। চলতি বছরের ফলাফলে বোর্ডভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী বোর্ড। পাস করেছে ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যশোর বোর্ড। পাসের হার ৭৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ ছাড়া কারিগরি বোর্ডে ৭৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ঢাকা বোর্ডে ৬৭ দশমিক ৫১, কুমিল্লায় ৬৩ দশমিক ৬, চট্টগ্রামে ৭২ দশমিক শূন্য ৭, সিলেটে ৬৮ দশমিক ৫৭, দিনাজপুরে ৬৭ দশমিক ০৩, ময়মনসিংহে ৫৮ দশমিক ২২ ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ৬৮ দশমিক ০৯ শতাংশ। পাসের হারে সবার তলানিতে রয়েছে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড। এ বছর বরিশাল বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। সারা দেশের ৩০ হাজার ৮৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর (২০২৪ সালে) শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৬৮টি। সে হিসাবে এবার শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমেছে ১ হাজার ৯৮৪টি। একজনও পাস করেনি এমন স্কুলের সংখ্যা এবার বেড়ে গেছে। গত বছর কেউ পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠান ছিল ৫১টি। চলতি বছরের ফলাফলে ১৩৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি। বিদেশ কেন্দ্র থেকে ৪২৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩৭৩ জন। পাসের হার ৮৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তি উভয় ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে ছাত্রীরা। চলতি বছর উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্রী ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪৫ জন ও ছাত্র ৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৮১ জন। মেয়েদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭৩ হাজার ৬১৬ জন। আর ছেলেদের মধ্যে ৬৫ হাজার ৪১৬ জন জিপিএ ৫ অর্জন করেছে।
ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, এসএসসিতে যে ফল প্রকাশিত হলো সেটি প্রকৃত ও সত্য। এতে কোনো ধরনের অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ার জন্য কাউকে বলা হয়নি। সামগ্রিকভাবে এবারের ফলে প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে। মূল্যায়ন যথাযথ হয়েছে। পূর্বের বছরগুলোতে নম্বর বাড়িয়ে পাস বাড়ানোর প্রবণতা ছিল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে কী হয়েছে সেটি আমরা বলব না। তবে, এখন যে তথ্য দিয়েছি সেটিই প্রকৃত। ফল নিয়ে ওপর মহল থেকে কোনো ধরনের চাপ ছিল না।
ফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিল উৎসবের আবহ। ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের মুখে হাসি, হাতে হাত, আর ড্রামের তালে উদ্যাপন। আষাঢ়ের বর্ষণেও শিক্ষার্থীদের আনন্দ এতটুকু মলিন হয়নি। নেচে গেয়ে উৎসব করেছে শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৮২৭ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৮২৬ জন পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৩৩ জন। কলেজটির অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এনামুল ইসলাম বলেন, এ ভালো ফলের কৃতিত্ব শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষার্থী সবার। রাজধানী ডেমরায় সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১৫২৩ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৪৪২ জন পাস করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৩৫ জন। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, অভিভাবকদের তদারকি, শিক্ষকদের সঠিক গাইডলাইন আর পরীক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই এ ফল সম্ভব হয়েছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে এবারের এসএসসিতে ২ হাজার ১২০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২ হাজার ৬১ জন। এর মধ্যে ১ হাজার ৩২৬ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। জিপিএ ৫ পাওয়া তাবাসসুম স্বর্ণা বলে, জিপিএ-৫ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল, তবে পেয়েছি। এখন ভালো কলেজে ভর্তি হতে চাই। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন, ভালো ফলাফলের উৎসব থাকলেও, সংখ্যার হিসেবে ভিকারুননিসা এবার খানিকটা পেছাল। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে পাস করেছে ২ হাজার ৫৮৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৫৪৯ জন শিক্ষার্থী। নরসিংদীর কাদির মোল্লা হাই স্কুল অ্যান্ড হোমস থেকে ৩২০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করেছে। চট্টগ্রামের কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল এমএ মাদরাসা থেকে ৭৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে সাতজন।
প্রতিবারের মতো এবারও খাতা চ্যালেঞ্জ বা ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদনের সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। এসএমএসের মাধ্যমে ১১ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত এ আবেদন করা যাবে। এ জন্য টেলিটক প্রিপেইড ফোন থেকে জঝঈ স্পেস বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর স্পেস রোল নম্বর স্পেস বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে।