মোংলা বন্দর গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) সকল সুচকেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেড়েছে রাজস্ব আয়, জাহাজের আগমন, কার্গো হ্যান্ডেলিং ও কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের হার। সেই সাথে নিট মুনাফা বেড়েছে ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সংবাদ সম্মেলনে, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ) কাজী আবেদ হোসেন, প্রধান অর্থ ও হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, প্রধান হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার রাসেল আহমেদ খান, পরিচালক (ট্রাফিক) মো. কামাল হোসেন, বোর্ড ও গণসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মাকরুজ্জামানসহ বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে, মোংলা বন্দরের সংকট, সম্ভাবনা ও সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, মোংলা বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিকতা, স্বল্প সম্পদের সঠিক ব্যবহার, দ্রুত পণ্য খালাস ও বোঝাইয়ের সুবিধা থাক্যায় দিন দিন এই বন্দর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাথে সাথে বন্দরের আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রতিপালনের পাশাপাশি মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে বন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বন্দরের স্টেক হোল্ডার, শিপিং এজেন্টস, সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টিভেডরসহ সব ধরনের বন্দর ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে নিয়মিত সভা করার ফলশ্রুতিতে জাহাজ আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাহাজ আগমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০টি, জাহাজের আগমন ঘটেছে ৮৩০ টি। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। এই সময়ে কার্গো হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮.৮০ লাখ মে.টন, হান্ডেলিং হয়েছে ১০৪.১২ লাখ মে.টন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫.৩২ লাখ মে. টন বেশি। কন্টেইনার হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার টিইইউজ, হান্ডেলিং হয়েছে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ।
রাজস্ব আয় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। গত অর্থবছরে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, রাজস্ব আয় হয়েছে ৩৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। বন্দরের নিট মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২০ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, বন্দরের নিট মুনাফা হয়েছে ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বেশি। যা শতাংশের দিক থেকে ২০৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে ১১ হাজার ৫৭৯টি রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি হয়েছে।
বন্দরের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে গণমাধ্যম কর্মীদের বলা হয়, মোংলা বন্দরে জাহাজ জট নেই, কন্টেইনার খালাসের ক্ষেত্রে টার্ন এরাউন্ড টাইম ১.৬৬ / ৪০ ঘণ্টা। গাড়ি আমদানিকারকদের জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে। কন্টেইনার রাখার জন্য ৭টি কন্টেইনার ইয়ার্ড, টাগ বোর্ট, পাইলট বোর্ট, মুরিং বোর্ট, পাইলট ডেসপাস বোর্ট, সার্ভে বোর্ট, ড্রেজার ইউনিট ইত্যাদিসহ বন্দরে ৩৮ টি সহায়ক জলযান রয়েছে। বন্দরের নিরাপওার ক্ষেত্রে আইএসপিএস কোড যথাযথ অনুসরণ করে চলেছে। বিদেশি জাহাজ আগমন ও নির্গমনের সময় নিরাপত্তা প্রদানের জন্য কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল দেয়। বন্দর থেকে নিরাপদে, কম খরচে সড়ক ও নৌপথে সহজে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মালামাল পরিবহনের সুবিধা রয়েছে। বন্দর জেটিতে সাড়ে ৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং এর সুবিধা রয়েছে। দীর্ঘ ১৪৪ কিলোমিটার বন্দর চ্যানেলে লাইটেড বয়া ও লাইট টাওয়ারের মাধ্যমে দিবারাত্রি নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নেভিগেশনাল সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে এবং বন্দর চ্যানেলে বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের জন্য ৪৯ টি বিভিন্ন পয়েন্টে বার্দিং সুবিধা রয়েছে। কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ১৩৪ টি আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। রুজভেল্ট জেটিতে নিরাপদে মালামাল সংরক্ষণ ও হ্যান্ডলিং সুবিধাদি বিদ্যমান। বন্দরে জেটি এলাকায় ওয়ান স্টেপ সার্ভিস সুবিধা রয়েছে, সেখানে একই সাথে পারমিশন প্রদান, বিল পরিশোধ, ইনডেন্ট, ইকুইপমেন্ট বুকিং এবং টাকা পরিশোধের সুবিধা রয়েছে। বর্তমানে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে খাদ্য শস্য, সার, গাড়ি, এলপি গ্যাস, লাইম স্টোন, সয়াবিন তেল, ভোজ্য তেল, জ্বালানী তেল, ফ্রেশফুড, সাধারণ পণ্য, জিপসাম, মেশিনারি যন্ত্রপাতি, কাঠের লগ, কয়লা, পাথর, ক্লিংকার, পামওয়েল, ফ্লুড ওয়েল, ফ্লাই এ্যাস, আয়রন, অয়েল সিড, স্টিল পাইপ, চিটাগুড় ইত্যাদি পন্য আমদানি হয়ে থাকে। অন্যদিকে রপ্তানিকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে, গার্মেন্টস পণ্য, পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, সাদা মাছ, শুকনা মাছ, ক্লে, কাঁকড়া, মেশিনারি, কটনইয়ার্ন, হিমায়িত খাদ্য।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ) কাজী আবেদ হোসেন জানান, এ বন্দর আগের তুলনায় আরো উন্নত হয়েছে, বেড়েছে সক্ষমতা। এখনো জাহাজ আগমনের হার বৃদ্ধি, বন্দরের জাটি নির্মান, ইনার বার ড্রেজিংসহ বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা আরো অনেকটাই বেড়ে যাবে।