ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটে অনিয়মের জন্য ‘পুরো আসনের ভোট বন্ধ’ করার ক্ষমতা ফেরানোর পক্ষে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া হলফনামায় কড়াকড়ি করা হচ্ছে। প্রার্থীর ফৌজদারি মামলার বিবরণ শুধু ২০ বছর নয়, আজীবনের তথ্য হলফনামায় যুক্ত করতে হবে। ৪৪ লাখ ভোটারের সম্পূরক হালনাগাদ ভোটার তালিকা আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করবে ইসি। দ্রুত সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকায় আসনসংখ্যা খুব বেশি না কমার ইঙ্গিত দিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা এবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁরা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেবেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। গতকাল অষ্টম কমিশন সভা শেষে এসব কথা বলেন অন্যতম নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইন, হলফনামা, ইসি সচিবালয় আইন, পোস্টাল ব্যালট, ইভিএম, দল নিবন্ধন অগ্রগতি, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সীমানা নির্ধারণসহ সার্বিক ?বিষয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আমলে নিয়ে তা বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে ইসি। বেলা ১১টার পরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ কমিশন সভা হয়। চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পুরোনো ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে চায় ইসি : ভোটে অনিয়ম হলে পুরো নির্বাচনি আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ফিরে পেতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব রাখার পক্ষে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতায়িত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ভোটে অনিয়ম রোধে আইনের দিকটা খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দেন বুধবার। এরপর দিন ইসি বলছে, এ ধরনের প্রস্তাবে কমিশনেরও সম্মতি রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোনো নির্দিষ্ট আসনের নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য আমরা আবেদন করেছি। পুরো আসনের নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা আমাদের আগে ছিল। সেটা বাদ দেওয়া হয়েছিল।
পোস্টাল ব্যালট ইন, আউট ইভিএম : ইসি আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এবার ভোট দেবেন। ভোটপদ্ধতি পোস্টাল ব্যালট। নিজ নিজ অবস্থান থেকে অনলাইন আবেদন করবেন। সময় বাঁচাতে এবার ব্যালট পেপার বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যালট প্রিন্ট হওয়ার পর ভোটারের কাছে পাঠানো হবে। রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ইভিএমের বিষয়টি নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি শুধু সংসদে নয়, ইভিএম সামনে কোনো স্থানীয় নির্বাচনে ব্যবহার হবে না।
সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ আগামী সপ্তাহে : এবার ২০ জানুয়ারি বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহ করে ইসি। এ হালনাগাদে বাদ পড়া প্রায় ৪৪ লাখ ভোটার নিবন্ধিত হয়েছেন। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শিগগিরই সম্পূরক ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এরপর দাবি, আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে আগস্টের মধ্যে হালনাগাদ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, এবার প্রায় ৪৪ লাখ ৬ হাজার ৬০২ জন বাদ পড়া ভোটার আমরা পেয়েছি, যারা নতুন করে নিবন্ধন করেছে। মৃত ভোটার পেয়েছি ২১ লাখ ৩২ হাজার ৫৯০ জন। সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আশা করি, আগামী সপ্তাহে সম্পূরক খসড়া তালিকা প্রকাশ হবে। বর্তমানে নারী ও পুরুষ ভোটারের ব্যবধান কমে এসেছে।
সীমানা চূড়ান্ত পর্যায়ে, আসনসংখ্যা কমবে না : ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশের উদ্যোগ নিচ্ছে ইসি। কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন পেলে শিগগিরই খসড়া প্রকাশ করা হবে। এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ২২১টা আসনের বিষয়ে কোনো আবেদনই হয়নি। আশা করি, আগামী সপ্তাহে পুরো প্রকাশ হবে। ঢাকায় আসনসংখ্যা খুব বেশি কমবে না বলে জানান তিনি। জনসংখ্যার ভারসাম্য আনার পাশাপাশি ভোটার সংখ্যার সমতা এনে আসনবিন্যাসের কথা জানান তিনি। বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভোটার তালিকা, যেটা জনসংখ্যার বাই প্রোডাক্ট। টেকনিক্যাল কমিটির কাছে রেফার করেছি। আগামী সপ্তাহে আপডেট জানাব।
শাপলা রাখা হয়নি প্রতীক তালিকায় : সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তাবিত নতুন তালিকা নিয়ে বিধিমালা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে শাপলা প্রতীক প্রস্তাব করা হয়নি। এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, শাপলা প্রতীক চেয়ে দুটি দল নাগরিক ঐক্য ও এনসিপি আবেদন করেছে। ইসি সব বিবেচনায় করে শাপলা তালিকাভুক্ত করেনি।
চার ইসির নেতৃত্বে পাঁচ কমিটি : ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চার নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। আইনশৃঙ্খলা, মাঠ প্রশাসন, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা, নির্বাচনি অনিয়ম তদন্ত ও প্রবাসী ভোট নিয়ে কমিটি কাজ করবে। প্রতিটি কমিটিতে একজন কমিশনারের নেতৃত্বে সাতজন সদস্য কাজ করবেন। গতকাল ইসির উপসচিব মো. শাহ আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আলাদা অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।
ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি তদারকি করবেন নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমেদ। আইনশৃঙ্খলা সমন্বয়সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। নির্বাচনি আইন, বিধি, প্রবিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন সম্পর্কিত কার্যাবলি সম্পাদন এবং ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির কার্যক্রম তদারকি ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করা হয়। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ। প্রবাসীদের ভোটাধিকার এবং দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সম্পর্কিত কার্যাবলি সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ কমিটির সভাপতি। নির্বাচনি কার্যক্রমে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের নেতৃত্বে এ কমিটি।