সব বিশাল আকারের মাংসাশী ডাইনোসর যে ভয়ঙ্কর, হাড়-গুঁড়ো করে ফেলার মতো কামড় দিতে পারত—এমন ধারণা ভ্রান্ত হতে পারে। সম্প্রতি কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক থেরোপড—যার মধ্যে টাইরানোসরাস রেক্স, স্পাইনোসরাস ও অ্যালোসরাস অন্তর্ভুক্ত; এরা বিশাল দেহে বিবর্তিত হলেও তাদের মধ্যে কেবল কিছু প্রজাতির মাথার গঠন ছিল শক্তিশালী কামড়ের জন্য উপযুক্ত।
ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের ড. অ্যান্ড্রু রোয়ের নেতৃত্বে গবেষকরা ১৮ প্রজাতির থেরোপডের খুলির ৩ডি স্ক্যান ও কম্পিউটার মডেলিং বিশ্লেষণ করেন। ফলাফলে দেখা যায়, টি রেক্স-এর খুলির গঠন ছিল অতি শক্তিশালী কামড় দেওয়ার জন্য অভিযোজিত—যা সহজেই শিকারীর হাড় ভেঙে ফেলতে পারত। কিন্তু জায়ান্টোরাসোরাস-এর মতো অন্যান্য বিশাল ডাইনোসরের কামড় তুলনামূলকভাবে হালকা ছিল এবং তারা শিকার ধরতে ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করত।
গবেষণায় যুক্ত প্রফেসর স্টিভ ব্রুসাটে বলেন, টাইরানোসরাসরা মাথার আকার অনেক বড় করেছে এবং এমন কামড় তৈরি করেছে যা শিকারির হাড় পর্যন্ত গুঁড়ো করে দিতে পারত। তবে এই জীবনধারা খুলির উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করত।
গবেষণা আরও জানাচ্ছে, আকারই কামড়ের শক্তি নির্ধারণ করে না। কিছু ছোট প্রজাতি, পেশির ঘনত্ব বেশি থাকার কারণে খুলিতে তুলনামূলক বেশি চাপ সৃষ্টি করত।
এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, প্রাগৈতিহাসিক যুগে শিকারি ডাইনোসরদের মধ্যে ছিল নানা ধরনের খাদ্যাভ্যাস ও শিকার কৌশল। কেউ কুমিরের মতো শক্ত কামড়ে শিকার করত, কেউ আবার বড় বিড়াল বা কোমোডো ড্রাগনের মতো কেটে বা ছিঁড়ে খাবার সংগ্রহ করত।
ড. রোয়ের ভাষায়, বড় শিকারি হওয়ার জন্য একটাই শ্রেষ্ঠ খুলির নকশা ছিল না, একাধিক নকশাই সমানভাবে কার্যকর ছিল। এটি প্রমাণ করে, ডাইনোসরদের জগৎ ছিল অনেক বেশি বৈচিত্র্যময় এবং বিশেষায়িত, যেখানে প্রতিযোগিতার চেয়ে সহাবস্থানই বেশি ছিল।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল