ইউক্রেনের জন্য বিশাল আকারের ঋণ প্রদানের জন্য রাশিয়ার জব্দকৃত সম্পদ ব্যবহারের দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নেতারা প্রথম পদক্ষেপ নিলেও ব্রাসেলসে ম্যারাথন আলোচনাটি স্পষ্ট সবুজ সংকেত দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) মস্কোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কিয়েভকে টিকিয়ে রাখতে ও ক্রেমলিনকে অর্থ প্রদান করতে তথাকথিত ‘ক্ষতিপূরণ ঋণ’ আলোচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে স্থান পায়। তবে আইনি ও রাজনৈতিক জটিলতা থাকায় শীর্ষ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত বেলজিয়ামের আপত্তির কারণে বাতিল করতে হয়েছে।
আইনি ও রাজনৈতিক জটিলতা এড়াতে ইউরোপীয় কমিশন একটি জটিল পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ইউরোপীয় কমিশন জানায়, আগামী কয়েক বছরে কিয়েভকে ১৪০ বিলিয়ন ইউরো বা ১৬২ বিলিয়ন ডলার হস্তান্তর করা যেতে পারে। তবে এখানে এর ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে।
২০২২ সালে মস্কোর ট্যাঙ্ক ইউক্রেনে ঢোকার পর ইইউ রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ২শ’ বিলিয়ন ইউরোর সম্পদ জব্দ করে। যার বেশিরভাগই বেলজিয়ামে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আমানত সংস্থা ইউরোক্লিয়ারে জমা আছে।
জি-৭ দেশগুলো ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের জন্য ৫০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ তহবিল তৈরির জন্য হিমায়িত সম্পদের সুদ ব্যবহার করেছে।
কিন্তু রাশিয়ার যুদ্ধ চার বছর ধরে চলতে থাকায় এবং ওয়াশিংটনের কাছ থেকে সমর্থন কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিয়েভের সমর্থকরা এখন তার বাজেটকে আরো শক্তিশালী করতে আরো এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
যদিও ইইউ’র ক’টি দেশ রাশিয়ার সম্পদ সরাসরি জব্দ করার আহ্বান জানালেও এটি অনেকের জন্য একটি লাল রেখা।
এই বিষয় এড়াতে, ইউরোপীয় কমিশন, ইইউ-এর নির্বাহী, একটি আর্থিক পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়। তারা জোর দিয়ে বলেছে, রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদকে স্পর্শ করবে না।
পরিবর্তে, প্রস্তাবের অধীনে ইইউ ইউরোক্লিয়ার গ্রুপ তহবিল থেকে ধার করে যা নগদে পরিণত হয়েছে। সেই অর্থ পরবর্তীতে ইউক্রেনকে ঋণ দেওয়া হবে। কিয়েভ কেবল তখনই ঋণ পরিশোধ করবে যখন রাশিয়া ইউক্রেনকে ক্ষতিপুরণ দেওয়ায় ইচ্ছা পোষণ করবে।
প্রকল্পটি ইইউ’র ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের ‘সম্পূর্ণ গ্যারান্টি’ পাবে যদি তারা অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় যে রাশিয়া ক্ষতিপূরণ না দিয়ে সম্পদ পুনরুদ্ধার করতে পারে। তাহলে ইউরোক্লিয়ার গ্রুপকে তাদের নিজেদেরই অর্থ পরিশোধ নিশ্চিত করতে হবে।
বেলজিয়াম এমন একটি পরিকল্পনার ব্যাপারে গভীর সংশয় প্রকাশ করেছে। দেশটি রাশিয়ার পক্ষ থেকে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী বার্ট ডি ওয়েভার জোর দিয়ে বলেছেন, এগিয়ে যাওয়ার জন্য বেলজিয়ামের অন্যান্য ইইউ রাষ্ট্রের কাছ থেকে দৃঢ় গ্যারান্টি প্রয়োজন। কারণ, মস্কো যদি চ্যালেঞ্জ করে তাহলে তারাও দায়বদ্ধতা ভাগ করে নেবে।
বৃহস্পতিবারের শীর্ষ সম্মেলনে তিনি সতর্ক করে দেন, যদি এই শর্তগুলো পূরণ না করা হয়, তাহলে তিনি ‘রাজনৈতিক ও আইনিভাবে, এই সিদ্ধান্ত বন্ধ করার জন্য’ তার সর্বাত্মক ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন।
২৭-জাতির ব্লকে রাশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচিত হাঙ্গেরি বাদে সকল সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত বৃহস্পতিবারের শীর্ষ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত বেলজিয়ামের আপত্তির কারণে বাতিল করা হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত