গাজা উপত্যকায় দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ এবং এর অর্থনৈতিক ধাক্কার কারণে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বিপাকে পড়েছে। জানা গেছে, জরুরি বাজেট বৃদ্ধি ছাড়া নতুন কোনো বড় যুদ্ধের জন্য হানাদার বাহিনীটি প্রস্তুত নয়। দেশটির সামরিক কর্মকর্তারা সরকারের কোষাগারকে সতর্ক করেছেন। তারা বলেছেন, শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে সামনে বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।
ইসারয়েলি গণমাধ্যম ওয়াইনেটের প্রতিবেদন অনুসারে, সামরিক কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, গাজায় তাদের পরিচালিত গণহত্যামূলক যুদ্ধে যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে সামরিক শিল্প এবং গোলাবারুদের মজুত বৃদ্ধিতে দ্রুত বিনিয়োগ প্রয়োজন।
সামরিক বাহিনীর প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিলো গাজা ও লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধটি এক মাস ধরে চলবে, বড়জোর আরও দুই সপ্তাহ বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু যুদ্ধটি বিভিন্ন ফ্রন্টে দীর্ঘায়িত হওয়ায় ইসরায়েলকে তাদের মৌলিক সামরিক সরঞ্জামের ঘাটতি পোষাতে ৯০০টিরও বেশি কার্গো বিমান এবং ১৫০টি সরবরাহকারী জাহাজের (যার বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা) ওপর নির্ভর করতে হয়েছে।
অফিসাররা অভিযোগ করেছেন, গত অক্টোবর ২০২৩ থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরও কোষাগার নতুন করে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং অস্ত্র উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় দিতে গড়িমসি করছে।
যদিও গত সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট (নেসেট) গাজা আগ্রাসন এবং ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের সামরিক আগ্রাসনের খরচ মেটাতে সামরিক খাতে অতিরিক্ত ৯.২ বিলিয়ন ডলার (৩০.৮ বিলিয়ন শেকেল) বরাদ্দ অনুমোদন করেছিল। এই অতিরিক্ত বরাদ্দের ফলে ২০২৫ সালের জন্য ইসরায়েলের মোট সামরিক ব্যয় ২৩৭ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৪.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫.২ শতাংশে পৌঁছেছে।
কিন্তু সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অতিরিক্ত তহবিলও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, আমাদের এখন উচ্চমানের সামরিক ব্যবস্থা, স্মার্ট বোমা, আকাশ প্রতিরক্ষা ইন্টারসেপ্টর কেনার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্রের দাম ৪ লাখ ডলার হতে পারে কিন্তু একটি অ্যারো ৩ ইন্টারসেপ্টরের দাম ৩ মিলিয়ন ডলার। এটি তৈরি করতেও মাসখানেক সময় লাগে।
আরেকজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বর্তমান ঝুঁকিগুলো তুলে ধরে বলেন, ইরান দ্রুত নিজেদের পুনরুদ্ধার করছে। গাজার যুদ্ধবিরতি অত্যন্ত ভঙ্গুর। লেবাননে প্রতিদিন হামলা চলছে। তুরস্ক সিরিয়ার দিকে নজর দিচ্ছে। পূর্ব সীমান্ত অরক্ষিত, পশ্চিম তীরও উত্তপ্ত হয়ে আছে।
নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ইসরায়েলের দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা সামরিক বাহিনীর আসল প্রয়োজন বা সরঞ্জামের ঘাটতি সম্পর্কে প্রকাশ্যে বিস্তারিত জানাতে পারছেন না।
সূত্র: প্রেস টিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল