আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ বলেছেন, উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে লিবিয়াতেই অভিবাসীরা সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। সেখানে তারা পাচারকারী এবং মিলিশিয়াদের হাতে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ভূমধ্যসাগরে যেসব অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে, তাদের অধিকাংশই লিবিয়া থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সমুদ্রপথটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যারা এখনও যাত্রা শুরু করেনি, তারাও ঝুঁকিপূর্ণ।
মরক্কোর রাজধানী রাবাতে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পোপ বলেন, আমরা প্রায়ই অভিবাসীদের কাছ থেকে শুনি, তারা অপহৃত হয়েছেন, মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে, নির্যাতন ও হামলার শিকার হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি নিজেও অনেক অভিবাসীর কাছ থেকে সরাসরি শুনেছি, কীভাবে তারা সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে আটক হয়ে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতিত হয়েছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি নীতির ফলে অনেকে এখন লিবিয়াতেই আটকা পড়ে আছেন। লিবিয়ার কর্তৃপক্ষের হিসাবে, চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশটিতে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা চার মিলিয়ন পর্যন্ত পৌঁছেছে।
পোপ বলেন, পাচারকারীদের হাতে থাকা অভিবাসীদের জন্য লিবিয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক ও অনিশ্চিত জায়গা। এই অভিবাসীদের মধ্যে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকেও অনেকে রয়েছেন।
তিনি বলেন, উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে লিবিয়াই এমন জায়গা, যেখানে অভিবাসীরা সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি।
পোপ জানান, লিবিয়ায় আটকে থাকা অভিবাসীদের দুর্দশা নতুন নয়, তবে ২০২৩ সালে সুদানে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর সংঘাতে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে সংঘাত শুরুর পর থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৫৭ হাজার সুদানি শরণার্থী লিবিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন।
পোপ বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন সুদানের যুদ্ধের মতো ঘটনাগুলো নিয়ে, যা বিপুলসংখ্যক মানুষকে বাস্তুচ্যুত করছে।
তিনি আরও জানান, জাতিসংঘের অর্থায়ন কমে যাওয়ায় অভিবাসীদের সহায়তা দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। সহায়তা ও সেবার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এখন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
পোপ জানান, লিবিয়ার পাশাপাশি তিউনিসিয়াও অভিবাসীদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যাত্রা-পথ। তবে ২০২৩ সালের ২৯০ মিলিয়ন ডলারের ইইউ চুক্তির পর সেখানে যাত্রা কিছুটা কমেছে। তবুও হাজার হাজার অভিবাসী, বিশেষ করে সাব-সাহারান আফ্রিকার লোকজন এখনো তিউনিসিয়ায় আটকা রয়েছেন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদ আইওএমকে অনুরোধ করেন, তারা যেন অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত নিজ দেশে স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করে।
সূত্র : এএফপি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত