বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন এক মহাজাগতিক বস্তুর খোঁজ পেয়েছেন যা পৃথিবীর নতুন ‘কোয়াসি-চাঁদ’ বা সহচর চাঁদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর নাম ২০২৫ পিএন৭ (2025 PN7)। এটি আকারে ছোট—মাত্র ১৮ থেকে ৩৬ মিটার প্রশস্ত এক শিলাময় গ্রহাণু।
হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নিয়মিত টেলিস্কোপ পর্যবেক্ষণের সময় এটি প্রথম শনাক্ত করেন। ২০২৫ সালের ২ আগস্ট হাওয়াইয়ের হালেয়াকালা আগ্নেয়গিরির ওপর অবস্থিত প্যান-স্টারস মানমন্দির থেকে এ আবিষ্কার করা হয়।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই গ্রহাণুটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০ লাখ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে যা চাঁদের দূরত্বের প্রায় দশগুণ। ধারণা করা হচ্ছে, এটি বহু বছর, এমনকি কয়েক দশক ধরে পৃথিবীর কক্ষপথের কাছাকাছি অবস্থান করবে।
গবেষক কার্লোস দে লা ফুয়েন্তে মার্কোস বলেন, ২০২৫ পিএন৭ আসলে ১৯৬০-এর দশক থেকেই মহাকাশে ছিল। কিন্তু খুব ছোট হওয়ায় এতদিন কোনো টেলিস্কোপে ধরা পড়েনি। এটি শুধুমাত্র তখনই দেখা যায়, যখন এটি পৃথিবীর কাছে আসে যেমনটা এই গ্রীষ্মে ঘটেছিল। তিনি এ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি–এর রিসার্চ নোটস সাময়িকীতে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোয়াসি-চাঁদ আসলে এমন মহাজাগতিক বস্তু যেগুলো পৃথিবীর খুব কাছাকাছি অবস্থানে ঘোরে, কিন্তু পৃথিবীর মহাকর্ষে বাঁধা নয়। ২০২৫ পিএন৭–এর মতো কোয়াসি-চাঁদগুলো সাধারণত অল্প সময়ের জন্য পৃথিবীর কাছে থাকে না; বরং অনেকদিন ধরে কাছাকাছি অবস্থানে ঘোরাফেরা করে। তবে একসময় এটি মহাশূন্যের দিকে সরে যাবে। কারণ, এটি পৃথিবীর সঙ্গে মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ নয়।
১৯৯১ সালে প্রথম এমন এক পৃথিবীসদৃশ কক্ষপথে থাকা গ্রহাণু, ১৯৯১ ভিজি (1991 VG), আবিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর থেকে জ্যোতির্বিদরা ধারণা করছেন, পৃথিবী–চাঁদ ব্যবস্থার চারপাশে এমন আরও কিছু ছোট গ্রহাণু ঘুরছে, যেগুলো মিলিয়ে একধরনের ক্ষুদ্র গ্রহাণু বল তৈরি করেছে যা ‘আরজুনা শ্রেণি (Arjuna class)’ নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০২৫ পিএন৭–এর আবিষ্কার আমাদের সৌরজগতে পৃথিবীর গতিপথ ও পারিপার্শ্বিক মহাজাগতিক গঠনের আরও নতুন দিক উন্মোচন করবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল