রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা আল্লাহ তায়ালার কাছে খুবই প্রিয় একটি আমল। এতে আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়।
দরুদ পাঠ আল্লাহর নির্দেশ রসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা আল্লাহতায়ালার নির্দেশ। বলা হয়েছে : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ পাঠান। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পাঠাও এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও (সুরা আহযাব: ৫৬)।’
আল্লাহতায়ালা এই আয়াতে সুস্পষ্টভাবে মুমিনদের রসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই প্রত্যেক মুমিনের জন্য অবশ্যপালনীয় হচ্ছে, রসুল (সা.)-এর প্রতি হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ও ভালোবাসা উজাড় করে দরুদ পাঠ করা। দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ খুশি হন। দরুদপাঠকারীর ওপর তিনি রহমত বর্ষণ করেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণিত হাদিস- তিনি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, নবীজি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত নাজিল করেন (সহিহ মুসলিম : ৪০৮)।’ দরুদ পাঠের মাধ্যমে কিয়ামতের দিন রসুল (সা.)-এর কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য অর্জিত হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণিত হাদিস রসুল (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে, যে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে (জামে তিরমিজি : ৪৮৪)।
উবাই ইবনু কা’ব (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, রাতের দুই-তৃতীয়াংশ চলে যাওয়ার পর রসুল (সা.) ঘুম থেকে জেগে দাঁড়িয়ে বলতেন : হে মানবগণ! তোমরা আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ কর, তোমরা আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ কর। কম্পন সৃষ্টিকারী প্রথম শিঙ্গাধ্বনি এসে পড়েছে এবং এর পরপর আসবে পরবর্তী শিঙ্গাধ্বনি। মৃত্যু তার ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, মৃত্যু তার ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। উবাই (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল (সা.)! আমি তো অধিক হারে আপনার প্রতি দরুদ পাঠ করি। আপনার প্রতি দরুদ পাঠের জন্য আমি আমার সময়ের কতটুকু খরচ করব? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ ইচ্ছা কর। তোমার চিন্তা ও কষ্টের জন্য তা যথেষ্ট হবে এবং তোমার পাপগুলো ক্ষমা করা হবে (জামে তিরমিজি- ২৪৫৭)।
জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ প্রেরণ করা উচিত। এটা রসুল (সা.)-এর পবিত্র নির্দেশনা। হজরত আউস ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের দিনসমূহের মাঝে শ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে জুমার দিন। এদিন তোমরা বেশি বেশি করে আমার প্রতি দরুদ পাঠ কর (সুনানে আবু দাউদ : ১৫৩১)।’
রসুল (সা.)-এর পবিত্র নাম উচ্চারিত হলে দরুদ শরিফ পড়া প্রতিটি মুমিনের প্রতি ভালোবাসার দাবি। একজন মুমিন তার প্রেমাস্পদ রসুল (সা.)-এর নাম শুনলেই একবুক ভালোবাসা নিয়ে নবীজির ওপর দরুদ পাঠ করবে- এমনটাই কাম্য। কিন্তু এরপরও যারা প্রেমাস্পদের নাম শুনে দরুদ পড়ে না তিনি তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। তাদের ‘কৃপণ’ বলে অভিহিত করেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিস রসুল (সা.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক (ধ্বংস হয়ে যাক) যার কাছে আমার নাম উচ্চারিত হয় অথচ আমার ওপর দরুদ পাঠ করে না (মুসতাদরাকে হাকেম : ২০৪২)।’
রহমতে ভরা বরকতময় এই আমলটি আমাদের অভ্যাসে পরিণত হোক। যাপিত জীবনের বাঁকে বাঁকে আলোর দীপ্তি ছড়াক। দরুদপাঠে জীবন হোক সুরভিত।
লেখক : খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ টঙ্গী, গাজীপুর