চীনের পূর্বাঞ্চলে চলমান তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা এই দাবদাহে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে। প্রচণ্ড গরমে ডরমেটরিতেও থাকা দায়। তাই অনেকে আশ্রয় নিচ্ছে হলওয়ে, লাইব্রেরি, এমনকি সুপারমার্কেটেও।
নতুন করে আলোচনায় এসেছে ডরমেটরির জীবনযাপন ব্যবস্থা। শানডং ও জিলিনসহ বিভিন্ন প্রদেশে শিক্ষার্থীরা তাঁবু গেড়ে থাকছে বাতানুকূল করিডোরে। কেউ কেউ আবার বাধ্য হয়ে হোটেলে উঠে পড়েছে, যদিও তা খরচসাপেক্ষ।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চ্যাংচুন শহরের ২০ বছর বয়সী এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেন, অনেক সময় আমরা হোটেলে যাই শুধু এসির জন্য। কিন্তু এটা আমাদের জন্য একটা বড় খরচ। তাই আমি মাঝে মাঝে একটা বরফের বাটি ফ্যানের সামনে রেখে নিজের মতো এসি বানিয়ে নিই।
এই বছরের ‘সানফু’ ঋতু প্রচলিত সময়ের আগেই এসে গেছে। যাকে চীনে ‘ডগ ডেজ’ বলা হয়। জুলাইয়ের শুরুতেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। হঠাৎ গরমে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, কেউ আবার প্রাণ হারাচ্ছেন।
সম্প্রতি উদ্ধার করা হয়েছে চিংদাও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ডরমেটরি গার্ডের মরদেহ। রবিবার নিজের কক্ষে অস্বাভাবিক অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁকে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৃত্যু এখনো তদন্তাধীন। এই ‘ডরমেটরি আঙ্কেল’ ছিলেন শিক্ষার্থীদের প্রিয়, বিশেষ করে ক্যাম্পাসের বিড়ালদের দেখভাল করতেন বলে তিনি ছিলেন সবার আপনজন।
তার মৃত্যুর পর চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন পোস্টে ভরে গেছে। একজন লিখেছেন, আজও অনেক লোক এল, কিন্তু আর কেউ আঙ্কেলের কণ্ঠ শুনতে পেল না। আরেকজন মন্তব্য করেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কেবল ভবনের উচ্চতায় নয়, বরং যারা নীরবে কাজ করে যায়, তাদের প্রতি আচরণে বোঝা যায়।
একই দিনে চিংদাও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীও হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জিমু নিউজ।
চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন একই সময়ে চলছে গরমের তাণ্ডব ও বন্যার হুমকি। পূর্ব উপকূলে টাইফুন আঘাত হেনেছে, যার জেরে ঝেজিয়াং ও ফুজিয়ান প্রদেশে জারি হয়েছে ফ্ল্যাশ ফ্লাড সতর্কতা। অপরদিকে, নেপাল-চীন সীমান্তে বন্যায় ভেঙে গেছে একটি সেতু, মারা গেছে অন্তত ৯ জন এবং নিখোঁজ রয়েছে আরও অনেকে।
এদিকে গরম যেন থামছেই না। ২০২২ সালে তীব্র গরমে মারা যান প্রায় ৫০ হাজার মানুষ, এমন তথ্য দিয়েছে মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’। ২০২৩ সালে জিনজিয়াং-এর একটি শহরে তাপমাত্রা রেকর্ড করে ৫২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৪ সাল ছিল চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর।
এ অবস্থায় চীনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ওপরও তীব্র চাপ পড়েছে। পূর্বাঞ্চলে এসির ব্যবহার এখন বিদ্যুৎ ব্যবহারের এক-তৃতীয়াংশের বেশি দখল করে নিয়েছে। জুলাইয়ের শুরুতেই দেশজুড়ে রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ চাহিদা রেকর্ড হয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল ইতোমধ্যে ডরমেটরিতে এসি বসানোর ঘোষণা দিয়েছে। চিংদাও বিশ্ববিদ্যালয়ও গ্রীষ্মকালীন ছুটির মধ্যেই এসি বসানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে।
সদ্য কলেজ ভর্তি পরীক্ষা দেয়া জিনান শহরের এক উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র বলেন, আমি চিংদাও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাই কিন্তু ডরমেটরিতে এসি না থাকলে ওখানে থাকা অসম্ভব।
চীনের এই চরম আবহাওয়া ও মানবিক বিপর্যয় বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই দেখা হচ্ছে। দিন দিন গরম যেন হয়ে উঠছে অসহনীয়। চ্যাংচুনের ওই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, ছোটবেলায় গ্রীষ্মে এই অঞ্চলে বেশ আরামদায়ক আবহাওয়া থাকত। এখন সেটা আর নেই, প্রতি বছর গরম বেড়েই চলেছে।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল