চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় যদি ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আটক করা হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে হবে। আইন অনুযায়ী আটক করার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থিত করার বিধান রয়েছে। গতকাল ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
এর আগে ৮ অক্টোবর মানবতাবিরোধী দুই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে দুই মামলাতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিককে আসামি করা হয়েছে। এ দুজনসহ দুই মামলার মোট আসামি ৩০ জন। বাকি ২৮ আসামির ২৫ জনই সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে ১৫ জন এখনো সেনাবাহিনীতে কর্মরত। এ ১৫ জন সেনা হেফাজতে আছেন বলে গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানায় সেনাবাহিনী।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের বলেন, আদালত থেকে কোনো পরোয়ানা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু হওয়ার পর আসামিকে আটক করা হলে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থিত করতে হবে। আমাদের সংবিধান, ফৌজদারি কার্যবিধি এবং এ আইনেও (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন) বিষয়টি আছে। আসামিকে যেখানেই গ্রেপ্তার করা হোক, তাকে আদালতে আনতে যতটুকু সময় ব্যয় হবে তা ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে উপস্থিত করতে হবে। এটা হচ্ছে আইনের বিধান। সেনাসদর সংবাদ সম্মেলন করলেও বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাইব্যুনালকে জানানো হয়নি জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে ডকুমেন্টারি পদ্ধতিতে কেউ বলেননি যে, আটক রাখা হয়েছে, মিডিয়ায় যেটা এসেছে, আমরা সেটা আমলে নিচ্ছি না। আমাদের যদি বলা হয় আটক রাখা হয়েছে, তাহলে আইন অনুযায়ী তাকে অবশ্যই আদালতের কাছে আনতে হবে। এটাই বিধান। যেহেতু আমরা জানি না, তাই এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।
গত শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেছিলেন, ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনো তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি। এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে গিয়ে খোঁজ নিতে বলেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, তারা (রেজিস্ট্রার কার্যালয়) এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাগুলো যথাস্থানে যথাসময়ে জারি করেছেন। এর বাইরেও যেসব কর্তৃপক্ষের কাছে অবগতির জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানাগুলোর কপি পাঠানো হয়েছিল, তাদের (সেনাবাহিনী) কাছেও এটা পৌঁছে গেছ বলে আমরা জানতে পেরেছি। আরেক প্রশ্নে তাজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩ এটা একটা বিশেষ আইন। এ আইনটি তৈরি করা হয়েছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, ডিসিপ্লিন ফোর্স পুলিশ বাহিনীসহ সব ডিসিপ্লিন ফোর্সের বিচারের জন্য। এ আইনে যে অপরাধগুলোর বিচার করা হচ্ছে, এ অপরাধগুলোর বর্ণনা বাংলাদেশের সাধারণ কোনো আইনে নেই। ইভেন আর্মি অ্যাক্ট, নেভি অ্যাক্ট, এয়ার ফোর্সের যে আইন আছে, সেখানেও নেই। এটা একটা স্পেশাল ল। এই অপরাধগুলো আন্তর্জাতিক আইনে বর্ণিত অপরাধ। এগুলোর বিচার করার ক্ষমতা কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের। এ ব্যাপারে সবার সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের এ আইনটা আমাদের সংবিধান দ্বারা প্রটেকটেড। আমাদের সংবিধানের ৪৭(৩) এবং ৪৭(ক) অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে- যেসব আইন মানবতাবিরোধী, ওয়ার ক্রাইমস (যুদ্ধাপরাধ), জেনোসাইডের বিচারে তৈরি করা হয়, সেই আইনগুলো যদি সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদের সঙ্গে, কোনো বিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণও হয়, তাহলে এই আইন প্রাধান্য পাবে। অর্থাৎ সংবিধান নিজেই বলে দিচ্ছে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের মূল্য সংবিধানের চেয়েও শক্তিশালী। সংবিধানই এটাকে প্রটেকশন দিয়েছে। সুতরাং এ আইনের কোনো বিধানকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। এই আইনের কোনো বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে কোনো আদালতে যাওয়া যাবে না। সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া যাবে না।
রিট পিটিশন দায়ের করা যাবে না। এই আইনটা যেহেতু সব আইনের ওপরে প্রাধান্য পাবে সুতরাং এ আইনের বিধানে যে বিচার প্রক্রিয়া আছে সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সবাইকে চলতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।