ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্টে যোগ দিতে ইতালির রাজধানী রোমে গেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট গতকাল বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। রবিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) রোমে পৌঁছান। ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ টি এম রোকিবুল হক প্রধান উপদেষ্টাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, সফরসূচি অনুযায়ী অধ্যাপক ইউনূস ফোরামের মূল অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। পাশাপাশি তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে খাদ্যনিরাপত্তা, দারিদ্র্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়নসহ বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিশ্বের নীতিনির্ধারক, গবেষক ও উদ্যোক্তারা খাদ্যব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে মতবিনিময় করেন। এবারের ইভেন্টটি ১০ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত রোমে এফএওর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী ১৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
তরুণদের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার : তরুণদের আরও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও সাহসী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তরুণদের মধ্যেই রয়েছে সমাজে অর্থবহ পরিবর্তন আনার শক্তি। গত শনিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সুইডেন ও নরওয়ের তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ আহ্বান জানান। সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস ও নরওয়ের হকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন সুইডেন ও নরওয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরুণ নেতা। প্রতিনিধিদের সঙ্গে ছিলেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, নর্ডিক অফিসের উপপরিচালক ক্যারোলিন আবরগ, কৌশলগত যোগাযোগ ও বহিঃসম্পর্ক বিশেষজ্ঞ কীর্তিজয় পাহাড়ি এবং যোগাযোগ বিশ্লেষক এমিলি আন্দ্রেসেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অনেকে বলেন তরুণরা ভবিষ্যৎ, আমি বলি তরুণরাই বর্তমান। আজকের তরুণরা আগের প্রজন্মের মতো নয়। প্রযুক্তির কারণে তোমরা এক নতুন প্রজাতির মানুষ-প্রায় ‘সুপারহিউম্যান’। শুধু নিজেকে প্রশ্ন কর-আমি কেমন একটি বিশ্ব গড়তে চাই? এরপর সেই লক্ষ্যে অঙ্গীকারবদ্ধ হও। অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, জুলাই ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বিশেষ করে অসংখ্য তরুণ-তরুণী তখন এক ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। জুলাই বিপ্লবীরা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দাবি তুলেছিল। আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলতে আমরা গঠন করেছি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ত্রিশটিরও বেশি দল মাসের পর মাস আলোচনায় অংশ নিয়ে অবশেষে সব দলের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। আমরা এ মাসেই জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটি হবে এ জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। প্রধান উপদেষ্টা তরুণ নেতাদের বাংলাদেশ ঘুরে দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখানকার প্রতিটি রাস্তা একেকটি গল্প বলে। দেয়াললিখন, দেয়ালচিত্র-সবই তরুণদের প্রতিরোধ ও স্বপ্নের জীবন্ত জাদুঘর।