রাজধানীর ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার থেকে মানিকনগর বাজার সড়কটি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী। পুরো সড়কে অসংখ্য খানাখন্দ। এর মধ্যে ধলপুর কমিউনিটি থেকে সিটি করপোরেশন আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কজুড়ে অসংখ্য ছোট বড় গর্ত। এ সড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব গর্তে রিকশা উল্টে যাওয়ার ঘটনা অহরহ। আর সিটি করপোরেশন আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে মানিকনগর বাজার পর্যন্ত সড়কটির এক পাশজুড়ে কেটে রাখা হয়েছে। অন্য পাশেও রয়েছে অসংখ্য গর্ত। গাড়ি চলাচলও অনুপযোগী। একটু বৃষ্টি হলে হেঁটে চলাচলও দায়। গত এক বছর থেকে খানাখন্দ সৃষ্টি হচ্ছে। চলাচলে দুর্বিষহ জীবন কাটালেও সিটি করপোরেশন কোনো খেয়ালই করছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
মানিকনগরের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন সায়েদাবাদে একটি পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা হিসেবে চাকরি করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত এক বছর ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার থেকে মানিকনগর বাজার পর্যন্ত সড়কটির বেহাল অবস্থা। আগে রিকশা দিয়ে চলাচল করতাম। এখন বাধ্য হয়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়। কারণ বড় বড় গর্ত থাকায় রিকশা দিয়ে চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। একই অবস্থা হাতিরঝিল থেকে কুনিপাড়া সড়কটি। বিশেষ করে চীনা ফ্যাক্টরি মোড় থেকে তেজগাঁও প্রধান সড়ক পর্যন্ত অসংখ্য ছোট বড় গর্ত রয়েছে। বিএসটিআই অফিসের সামনের সড়কটিতে রয়েছে কয়েকটি বড় বড় গর্ত। সড়কটিতে চলাচল করা গাড়ি প্রায়ই গর্তে পড়ে আটকে যাচ্ছে। রিকশা গর্তে পড়ে উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। একই অবস্থা বিটাক রোড ও বেগুনবাড়ী সড়কের।
সরেজমিরে দেখা যায়, হাতিরঝিল সড়কটির অবস্থাও বেহাল। পুরো হাতিরঝিলের জায়গায় জায়গায় অসংখ্য বড় বড় গর্ত। একই অবস্থা রাজধানীর খিলগাঁও উড়ালসড়কের মুখ থেকে শুরু করে নন্দীপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত সড়কটিতে। সিপাহিবাগ বাজার থেকে রামপুরা পর্যন্ত সড়কটিতে রয়েছে অসংখ্য গর্ত। একটু বৃষ্টি হলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে সড়কটি। দয়াগঞ্জ মোড় থেকে জুরাইন রেলগেট পর্যন্ত গেন্ডারিয়া নতুন সড়কটি জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্ত। গর্তের আকার এত বড় যে সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় কয়েক ফুট পানির নিচে। এ ছাড়া মুগদা মেডিকেল কলেজের সামনের অতীশ দীপঙ্কর সড়কটি তিন বছরের বেশি সময় ধরে ভোগাচ্ছে মানুষকে। বিশেষ করে মেডিকেল কলেজের সামনের সড়কটি খানাখন্দে ভরা। রোগী ও স্বজনদের জন্য এক নতুন দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ রোগী বহনকারী রিকশা কিংবা অ্যাম্বুলেন্স খানাখন্দে আটকে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তাটিসহ আশপাশে বিভিন্ন রাস্তায় নানা অংশ কেটে রাখা হয়েছে। খননকাজ শেষ হলেও দীর্ঘদিন ধরে ভরাট করা হয়নি। পাশে পড়ে থাকা এক্সকেভেটর রাস্তা দখল করায় পথ আরও সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া মুগদা থেকে মান্ডা সড়কটির অবস্থাও বেহাল। একই অবস্থা চকবাজার ও এর আশপাশের এলাকায় খানাখন্দে ভরা। বিশেষ করে, জেলখানা রোড থেকে চকবাজার পর্যন্ত রাস্তা ও ফুটপাতে বড় বড় গর্ত দেখা যায়। পোস্তগোলা, শাহীন মসজিদ, ইসলামগঞ্জ, জয়নক রোড, কেল্লার মোড়ের রাস্তায় অসংখ্য খানাখন্দ রয়েছে। পোস্তগোলা থেকে শাহীন মসজিদ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের খানাখন্দে ভরা ছিল। কোথাও পাইপ স্থাপন কিংবা পলেস্তারার কাজ চলমান রয়েছে। জয়নক রোড ও কেল্লার মোড়ের রাস্তায় অসংখ্য ছোট বড় গর্ত রয়েছে। বংশাল থেকে গুলিস্তানমুখী মূল সড়কের অর্ধেক কাটা থাকায় দিনভর যানজট লেগে থাকে। এ ছাড়া হাজী ক্যাম্প থেকে শুরু করে কাওলার বাজার মোড় পর্যন্ত সড়কের বেশির ভাগ অংশেই বড় বড় গর্ত। দিনের বেশির ভাগ সময় এ সড়কে চলাচল করা গাড়িগুলো ভাঙা রাস্তার গর্তে আটকে যায়। বিমানবন্দর থেকে রাজলক্ষ্মীর সামনে ফুটওভার ব্রিজটির নিচের রাস্তায় বিশাল এলাকাজুড়ে গর্ত হয়ে আছে। উত্তরার পলওয়েল মার্কেটের সামনের সড়ক থেকে শুরু করে বিআরটির নিচের আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়ক অসংখ্য ছোট বড় গর্তে ভরা। বৃষ্টি নামলে এ পুরো এলাকা বড়সড় পুকুরে পরিণত হয়।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, বৃষ্টির পানিতে রাস্তার সংস্কার টেকসই হয় না বিধায় প্রলম্বিত বৃষ্টিপাতের জন্য ডিএসসিসির আওতাধীন বিভিন্ন সড়কের মেরামত ও উন্নয়ন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। শিগগির জনদুর্ভোগ লাঘবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগুলো সংস্কার করা হবে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সিটি করপোরেশন সড়ক সংস্কারে প্রতি বছর শতকোটি টাকা খরচ করে। কিন্তু সড়ক টেকসই হয় না। এর অন্যতম কারণ কাজ শুরুর আগেই কমিশন ও ভাগাভাগিতে বরাদ্দের ২০-৩০ শতাংশ প্রভাবশালীর পকেটে চলে যায়।