আফগানিস্তান সীমান্তে শনিবার রাতভর ব্যাপক সংঘর্ষের পর হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দেশটি জানিয়েছে, তাদের সেনাদের হামলায় আফগান তালেবানের ২০০ জনের বেশি সৈন্য ও অন্যান্য যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আফগানদের হামলায় নিজেদের ২৩ সৈন্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
গতকাল পাক সেনাবাহিনীর মিডিং উইং বলেছে, আফগানিস্তান সীমান্তে রাতভর সংঘর্ষে আমাদের ২৩ সেনা নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছেন।
তালেবান সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দাবি করে পাক সেনাবাহিনী বলেছে, তালেবানের অবকাঠামো, সেনা পোস্ট, ক্যাম্প, হেড কোয়ার্টার এবং সন্ত্রাসীদের সাপোর্ট নেটওয়ার্কের ক্ষতি ছিল ব্যাপক। যার সবই হয়েছে সীমান্ত ও কৌশলগত অঞ্চলে। এদিকে গতকাল সকালে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ দাবি করেন, তাদের হামলায় ৫৮ পাক সেনা নিহত হয়েছেন। আর নিজেদের ৯ সেনা প্রাণ হারান বলে জানান তিনি।
শনিবার রাতের আকস্মিক হামলা-পাল্টা হামলায় দুই প্রতিবেশীর মাঝে নতুন করে যুদ্ধের দামামা বাজছে। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর দুই প্রতিবেশীর মাঝে এবারের এ সংঘাতকে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন করে এ সংঘাতের জন্য উভয় দেশই পরস্পরকে দোষারোপ করছে। পাকিস্তানে আফগানিস্তানের হামলাকে ‘বিনা উসকানিতে আগ্রাসন’ বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি বলেছেন, বেসামরিক জনগণের ওপর গুলিবর্ষণ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্রুত ও কার্যকর জবাব দিয়েছে। এদিকে কাবুলের তালেবান সরকার অভিযোগ করেছে, আফগানিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে গত বৃহস্পতিবার রাজধানী কাবুলসহ বিভিন্ন স্থানে প্রাণঘাতী বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। আফগান কর্মকর্তারা বলেছেন, বার বার আকাশসীমা লঙ্ঘনের জবাবে শনিবার রাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
আফগানিস্তান-পাকিস্তানকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান সৌদি-কাতারের
রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব ও কাতার। এ নিয়ে সৌদি আরব বলেছে, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় চলমান উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে সৌদি আরব। আমরা উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে বের করার অনুরোধ জানাই। ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা এমন পথে হোক যেটি শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে, সেটিতে সৌদির অব্যাহত সমর্থন থাকবে।
অপরদিকে কাতার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, উভয়পক্ষকে আমরা আলোচনা, কূটনীতি এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি। এ ছাড়া এমন পথে দ্বন্দ্ব নিরসন করুন যেটি উত্তেজনা প্রশমন এবং আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সৌদির মতো কাতারও পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ হিসেবে অভিহিত করেছে।
কাতার ও সৌদি আরবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ‘আপাতত সময়ের জন্য’ পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত থামানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারত সফররত আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। গতকাল নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শনিবার রাতে আমরা আমাদের সামরিক লক্ষ্য অর্জন করেছি। আমাদের বন্ধু কাতার এবং সৌদি আরব আহ্বান জানিয়েছে, এ দ্বন্দ্ব শেষ হওয়া উচিত। তাই এ মুহূর্তে আমাদের পক্ষ থেকে সংঘাত থামানো হয়েছে। সূত্র : আলজাজিরা, এএনআই