মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়াসহ তিন দফা দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর দফায় দফায় লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এ সময় জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। তাদের মধ্যে তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় পাঁচ শিক্ষককে। গতকাল সকালে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে পুলিশের বলপ্রয়োগের প্রতিবাদে আজ সোমবার থেকে সারা দেশের সব বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষকদের এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, শিক্ষকদের পেটানো কোনো সভ্য রাষ্ট্রের চরিত্র হতে পারে না।
জানা গেছে, সকাল থেকেই তিন দফা দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। দাবিগুলো হলো- মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা ছাড়াও চিকিৎসা ভাতা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা এবং এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করা। আন্দোলন শুরুর কিছু সময় পর শিক্ষকদের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে সচিবালয়ে যান। বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। দুপুরের দিকে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে সড়ক ছেড়ে দিতে বলে পুলিশ। কিন্তু আন্দোলনকারীরা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক ছাড়বেন না। এরপর বেলা পৌনে ২টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিচার্জ করা হয়। এতেও শিক্ষকরা সড়ক না ছাড়ায় কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর পরও অনেক শিক্ষককে সেখানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এ সময় শিক্ষকদের ওপর জলকামান ব্যবহার করা হয়। শিক্ষকরা আবার একত্রিত হলে আবারও লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পুলিশের এমন বাধার মুখে শিক্ষক কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে তাদের কর্মবিরতি কর্মসূচি ঘোষণা করে।
জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ যৌক্তিক আন্দোলনকে পণ্ড করে দিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আমাদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ এবং কয়েকজন শিক্ষককে আটকের প্রতিবাদে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করা হবে। দাবিগুলো মেনে নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি ও লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
বিকালে শহীদ মিনারে গিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, শিক্ষকদের যেভাবে পেটানো হয়েছে, এটা কোনো সভ্য রাষ্ট্রের চরিত্র হতে পারে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষকদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারের বৈষম্যের এই মুনাফিকি আমরা মেনে নেব না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের স্থান ত্যাগ না করার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, আপনাদের এই নৈতিক দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি এবং আপনাদের ওপর হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। এ সময় এনসিপির আরেক নেতা সামান্থা শারমিন বলেন, শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, শিক্ষকদের অধিকাংশই শহীদ মিনারের দিকে চলে গেলেও অনেকে যেতে চাননি। পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল মেরেছেন। তাদের কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যারা নেতৃত্বে আছেন, সেই শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে পরিচয় নিশ্চিত হলে ছেড়ে দেওয়া হবে।