একসময় মাত্র চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে যে সিলেট পৌঁছানো যেত এখন সেই সময়ের স্মৃতি যেন অতীত গল্প। বর্তমানে একই দূরত্ব পাড়ি দিতে লাগছে ২৫ ঘণ্টা পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় একদিনেরও বেশি। আর যদিও ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টায় পৌঁছানো সম্ভব হয় তাহলে সেটি এখন “সৌভাগ্যের ভ্রমণ” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সিলেটের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের যোগাযোগব্যবস্থা এখন বিপর্যস্ত। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সম্প্রসারণ কাজ বছরের পর বছর ধরে ধীর গতিতে চলছে, ফলে প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে সড়কে। তীব্র এই দুর্ভোগে ক্ষুব্ধ সিলেটবাসী আজ (রবিবার) সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার সিলেট বন্ধ কর্মসূচি পালন করেছে। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। পাশাপাশি আগামীকাল সোমবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সূচনাস্থলে গণঅবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে।
ট্রেনের টিকিট নেই, বিমানের ভাড়া পাঁচ গুণ
রেলপথেও দুর্ভোগ কম নয়। অধিকাংশ যাত্রী ট্রেনের টিকিট পাচ্ছেন না। অন্যদিকে বিমানের ভাড়া বেড়ে গেছে আগের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ। আগে যেখানে ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় টিকিট পাওয়া যেত, এখন তা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার থেকে সাড়ে ১৫ হাজার টাকায়। বলছিলেন সিলেট কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এহছানুল হক তাহের।
“২৫ ঘণ্টার নরকযাত্রা”
সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কাপড় ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম সম্প্রতি ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পায়ে অস্ত্রোপচার শেষে বাড়ি ফিরেছিলেন। পরে আবার জটিলতা দেখা দেওয়ায় তাঁকে ঢাকায় ফিরতে হয়। ট্রেনের টিকিট না পেয়ে বিমানের দামের কথা শুনে অবাক হয়ে যান। প্রতিটি টিকিট ১৫ হাজার টাকা! শেষমেশ তিনি ৭ অক্টোবর রাত ১২টা ১৫ মিনিটে লন্ডন এক্সপ্রেসে রওনা দেন।
তিনি জানান, “ভোর ৫টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের তিস্তা ব্রিজ এলাকায় জ্যামে পড়ি। সকাল ১০টা পর্যন্ত মাত্র কয়েক হাত এগিয়েছি। শাহবাজপুর সেতু পার হতে দুপুর দেড়টা, সরাইল বিশ্বরোড পৌঁছাতে রাত ৮টা, এরপর আশুগঞ্জ হয়ে ঢাকায় পৌঁছাই রাত সাড়ে ১২টায়। পুরো যাত্রায় লেগেছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি।”
অভিযোগ করে তিনি বলেন, “মিরপুরের হাসপাতালে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল, কিন্তু সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় দেখা করতে পারিনি। স্লিপার বাসে উঠেছিলাম আরাম পেতে, কিন্তু সাড়ে ২৪ ঘণ্টার বসে থাকার পর পা ফুলে গেছে।”
“৯৮ সালের বন্যার পর এমন কষ্ট পাইনি”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েকে পৌঁছে দিতে ৬ অক্টোবর রাত ১১টায় গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসে রওনা দিয়েছিলেন সিলেটের সংস্কৃতি সংগঠক হুমায়ুন কবির জুয়েল। তিনি বলেন, “রাত ১১টায় রওনা দিয়ে পরদিন রাত ১১টায় ঢাকায় পৌঁছাই। ১৯৯৮ সালের বন্যার সময় শেষবার ২৪ ঘণ্টায় পৌঁছাতে হয়েছিল। এবার ২৭ বছর পর আবার সেই একই অভিজ্ঞতা।”
এমন অচলাবস্থার প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার রাতে আরিফুল হক চৌধুরীর বাসায় বৈঠক করেন সিলেটের শিক্ষক, পরিবহন ও ব্যবসায়ী নেতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তারা দাবি জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাজ দ্রুত শেষ করা, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে নতুন ট্রেন ও বগি চালু করা, এবং বিমানভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার।
আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছিলেন, “আজ রবিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রতীকী ধর্মঘট চলবে। এ সময় নগরের সব দোকান ও বিপণিবিতান বন্ধ থাকবে, যানবাহন চলাচলও বন্ধ থাকবে। নগরের কোর্ট পয়েন্টে এক ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি শেষে ১৫ দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হবে। এরপরও সমাধান না এলে কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করা হবে।”
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ
বিডি প্রতিদিন/আশিক