রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষরের আগে সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের সময় ও পিআর পদ্ধতিতে (প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তবে দুই দল গণভোটের সময় ও পিআর পদ্ধতি নিয়ে তাদের আগের অবস্থানে অনড় রয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশনের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এবং জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পৃথকভাবে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনা অনুযায়ী আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। বৈঠকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে কেন করতে হবে তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এরপর জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ ও ব্যারিস্টার শিশির মনিরের সঙ্গে আলোচনায় গণভোট আগে করার পক্ষে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরা হয়। তারা একটি প্যাকেজে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছেন। কমিশন তাদের যুক্তি শুনেছে। এর আগের দিন জামায়াতের নেতাদের পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গেও একইভাবে আলোচনা করেন অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। এ বিষয়ে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা তাদের মতো করে মতামত দিয়েছেন। আমরা তাদের বক্তব্য শুনেছি। সেগুলো বিচার বিশ্লেষণ করা হবে। কোনো ধরনের অগ্রগতি হয়েছি কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অগ্রগতি তো হচ্ছেই। দলগুলো তাদের অবস্থান থেকে নমনীয় আচরণ করছে। সেই হিসেবে অগ্রগতি হচ্ছে, তবে ধীরগতিতে। আশা করি দলগুলো একটা জায়গায় আসবে। প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার পর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতির প্রস্তাব জমা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও দল দুটি নিজেদের অবস্থানে কিছুটা নমনীয় আচরণ প্রদর্শন করেছে এবং ধীরে হলেও অগ্রগতি হচ্ছে। সব দলকে একটা জায়গায় আনার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কমিশনের সদস্যরা। তারা জানান, প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরে এলে বাস্তবায়নের সুপারিশ উপস্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে দলগুলোর কাছেও জুলাই বাস্তবায়ন পদ্ধতির খসড়া পাঠানো হবে। এদিকে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের তারিখ ১৫ অক্টোবর নির্ধারণ করা হলেও গত শনিবার কমিশনের বৈঠকের সময় দুই দিন পিছিয়ে ১৭ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে।