বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, নিজেদের মধ্যে অযাচিত তর্কবিতর্কের মাধ্যমে যেন এমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব না হয়, যাতে বাংলাদেশের ভালো চায় না এমন শক্তি আবারও সুযোগ পায়। রাজনৈতিক বিতর্কের সুযোগে যাতে কেউ দেশ ধ্বংস করতে না পারে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। গতকাল খুলনা মহানগরী বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। নগরীর সার্কিট হাউস ময়দানে দীর্ঘ ১৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় এ কাউন্সিল। সকালে নানা আনুষ্ঠানিকতায় কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান। এর আগে খ খ মিছিল নিয়ে রংবেরঙের প্ল্যাকার্ড হাতে সম্মেলনস্থলে আসেন নেতা-কর্মীরা। এর আগে সকাল সোয়া ১০টায় জাতীয় ও দলীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। খুলনা মহানগরী বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তারেক রহমান বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। ব্যক্তিস্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণ আমাদের আবারও সুযোগ দিলে অতীতের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করবে বিএনপি। নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দলে যত বেশি গণতন্ত্রের চর্চা করা হবে তত ভালোমানুষ পর্যায়ক্রমে নেতৃত্বে আসতে পারবে। একইভাবে দেশে গণতন্ত্র চর্চা হলে দেশ ভালো নেতৃত্ব পাবে। গণতন্ত্রের সপক্ষশক্তি হিসেবে বিএনপির প্রতিটি কর্মীকে অব্যাহতভাবে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। তারেক রহমান অভিযোগ করেন, স্বৈরাচার আমাদের খাদের কিনারে পৌঁছে দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাদের শাসনামলে দেশের মানুষ প্রায় সবাই নির্যাতিত ছিল। মিথ্যা মামলা, গুম, খুন দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। ১৪০০ মানুষ শহীদ হয়েছেন মুক্ত বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য। তাদের প্রত্যাশিত দেশ গড়তে দরকার স্থিতিশীলতা। রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির রূপরেখা ৩১ দফায় দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে দলের এই শীর্ষ নেতা বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্পসহ সব সেক্টরে বিএনপি কাজ করবে। যুক্তরাজ্যে মানুষের স্বাস্থ্যসেবার সব দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য সে ব্যবস্থা গড়ে তুলব। আগামী নির্বাচনে জনগণকে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান সম্মেলনের উদ্বোধক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, গবেষণা সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কু ু, সাবেক এমপি সৈয়দা নার্গিস আলী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, কাজী মিজানুর রহমান, কে এম হুমায়ূন কবির, হাফিজুর রহমান মনি, শেখ মোহাম্মদ আলী বাবু, মুর্শিদ কামাল প্রমুখ। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন মহানগরী বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন সৈয়দা রেহানা ঈসা। দ্বিতীয় অধিবেশনে খুলনা জেলা স্টেডিয়ামসংলগ্ন জিমনেসিয়ামে সরাসরি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের ছয় পদে ১২ জন প্রতিদ্বন্দিতা করেন। পাঁচ থানা কমিটির ৫০৫ জন ভোটার নির্বাচনের মাধ্যমে মহানগরী বিএনপি নেতাদের নির্বাচিত করেন।