রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) ২০৫ বিঘা আয়তনের ক্যাম্পাস থেকে লুট হয়ে গেছে ১ হাজারের বেশি গাছ। আমবাগান, মেহেগনিবাগান উজাড় করে গাছগুলো কাটা হয়েছে।
রাজশাহী নগরীর সিলিন্দায় অবস্থিত এই বিশাল এলাকায়ই হবে রামেবির ক্যাম্পাস। এজন্য ব্যক্তিমালিকানার বাগান-ভবনসহ যেখানে যা ছিল, তার সবকিছুই সরকার অধিগ্রহণ করেছে। এ জায়গা থেকেই সম্প্রতি লুট হয়ে গেছে শত শত তাজা গাছ। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, ওই ক্যাম্পাসে গাছ আছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। গাছ বিক্রির জন্য নম্বরিং করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো দরপত্র হয়নি, কাউকে কার্যাদেশও দেওয়া হয়নি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত এক মাস বাগান ধরে গাছ কাটা হচ্ছিল। এর ফলে গাছগাছালিতে ভরে থাকা জায়গার অনেক অংশ ফাঁকা হয়ে পড়েছে। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে বালু ভরাটের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গাছগুলো কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। বিষয়টি বিভিন্ন মহলে জানাজানি হলে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে বালু ভরাটের কাজটি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসাইন কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির রাজশাহীর ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তো শুধু বালুভরাট করছি। যেদিকে গাছ কাটা হয়েছে, সেদিকে আমাদের কোনো কাজ নেই। সুতরাং, কারা গাছ কেটেছে বলতে পারব না।’ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কর্তৃপক্ষের শোকজের জবাবও দিয়েছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, গাছগুলো কাটার সঙ্গে বালু ভরাট কাজের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন জড়িত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্থানীয়ভাবে বালু ভরাটের কাজ করছেন রাজশাহী মহানগর শিবিরের সাবেক সভাপতি খায়রুল ইসলাম, শিবির নেতা শাকিলুর রহমান। তবে শাকিলুর রহমানের দাবি, তারা গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ১০ মাস ধরে একটি-দুটি করে গাছ কাটা হচ্ছিল। মাসখানেক ধরে প্রচুর গাছ কাটা শুরু হলে এবং ট্রলিতে করে বাইরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন মহলে জানাজানি হয়। কারা গাছ কাটার কাজ পেয়েছে, এর খোঁজখবর নিতে গিয়ে দলীয় কিছু নেতা-কর্মী জানতে পেরেছেন যে, গাছ কাটার কোনো দরপত্রই হয়নি। এরপর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে বালু ভরাটের কাজ পাওয়া হোসাইন কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে শোকজ করে একটি চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ও রামেবির পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীর বলেন, ‘গাছ আমাদের পক্ষ থেকে কাটা হয়নি। গাছ কাটা হয়েছে ঠিকাদারের পক্ষ থেকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে, বেআইনিভাবে। আমরা তাকে প্রাথমিকভাবে শোকজ করেছি। তারা গতকাল অফিস সময়ের শেষ দিকে জবাব দিয়েছে। তাদের জবাব বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নেব।’