একজন সুন্দর মনের অনুসরণীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব শিবলী সাদিক। তিনি শারীরিকভাবে চলে গেছেন; কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর কর্ম ও জীবন। তাঁর চিন্তা-চেতনা। তাঁর আদর্শ। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা যত বেশি শিবলী সাদিকের মতো পরিচালক-ব্যক্তিত্ব তথা মানুষকে অনুসরণ করবেন এবং তাঁর কর্ম নিয়ে করবেন চর্চা, তত বেশি সমৃদ্ধ হবে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন শিবলী সাদিক।
ফ্যাশন সচেতন ছিলেন। বন্ধুরা ডাকতেন ‘স্টাইলিশ বয়’ বলে, অনেকেই বলতেন হিরো। আর এসব শুনেই নায়ক হওয়ার ইচ্ছা জাগে তরুণ শিবলী সাদিকের। তাই এফডিসিতে যাতায়াত শুরু করেন। পরিচয় হয় বরেণ্য নির্মাতা সুভাষ দত্ত ও মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। চারুকলার ছাত্র শুনে নির্মাতা মুস্তাফিজুর তাঁকে সেট ডিজাইনার ও শিল্প নির্দেশক হিসেবে কাজের প্রস্তাব দেন। চলচ্চিত্রের সঙ্গে শিবলীর জড়িয়ে পড়ার গল্পটা ছিল এমনই। তখন থেকেই সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন শিবলী সাদিক। ১৯৬৩ সালে মুস্তাফিজুর রহমানের সহকারী পরিচালক হিসেবে ‘তালাশ’ ছবিতে কাজ করেন।
একে একে অনেক চলচ্চিত্রের প্রধান সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এর মধ্যে আলিঙ্গন (১৯৬৯) ও অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী (১৯৭২) অন্যতম। চারুকলা থেকে পড়াশোনা শেষ করে সৈয়দ আওয়ালের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করেন তাঁর প্রথম সিনেমা ‘বালা’। তবে নির্মাতা হিসেবে শিবলী সাদিকের প্রথম নির্মাণ ছিল বসতবাড়ি নামের একটি তথ্যচিত্র।
১৯৭৫ সালে একক নির্মাণেই নিজের জাত চেনান এই নির্মাতা। ববিতা, বুলবুল আহমেদ, মিনু রহমান, বেবি জামান, খলিলুর রহমানের মতো অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে নির্মাণ করেন ‘জীবন নিয়ে জুয়া’। ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন আবদুল্লাহ আল-মামুন।
১৯৭৫ সালে মুক্তির পর প্রশংসায় ভাসেন শিবলী সাদিক। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। তখন থেকেই চলচ্চিত্রাঙ্গনে একটি কথাই ছড়িয়ে পড়ে- শিবলী সাদিক মানেই হিট। হয়েছিলও তাই। তিন কন্যা, দোলনা, অচেনা, মা মাটি দেশ, ভেজা চোখ, নীতিবান, দুর্নাম, ত্যাগ, মায়ের অধিকার, অন্তরে অন্তরে, আনন্দ অশ্রু- এসব হিট ছবির নাম। ভেজা চোখ টানা পাঁচ মাস দেশের প্রায় ২০০ সিনেমা হলে চলেছে। শিবলী সাদিক ২২টি সিনেমা নির্মাণ করেছেন। শিবলী সাদিকের হাত ধরেই চলচ্চিত্রে নিয়মিত হয়েছিলেন নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। ২০০৬ সালে তাঁর পরিচালিত সর্বশেষ ছায়াছবি ‘বিদেশিনী’ মুক্তি পায়। শিবলী সাদিক ১৯৪১ সালে ব্রিটিশ ভারতের নওগাঁ মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম শিবলী সাদিক হায়দার। ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা।