রাজশাহীর ২৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ১৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ মোট ২৪৫টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ওষুধ পেত গ্রামের সাধারণ মানুষ। রাজশাহীর এসব কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২৩ ধরনের ওষুধ সরবরাহ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীরও। কোনো কোনো কেন্দ্রে সবশেষ ওষুধ এসেছে গত ডিসেম্বরে। এর পর থেকে সরবরাহ বন্ধ। চিকিৎসা কেন্দ্রে এসে ওষুধ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে সেবাপ্রত্যাশীরা। এ ছাড়া চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে দেখা গেছে, শুধু ওষুধ নয়; জনবল ও চিকিৎসাসামগ্রী সংকটেও রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামতে বসেছে।
জানা যায়, রাজশাহীর পবা উপজেলায় ৩২টি, তানোরে ১৯টি, মোহনপুরে ১৯টি, গোদাগাড়ীতে ৩৪টি, দুর্গাপুরে ১৯টি, পুঠিয়ায় ২৮টি, চারঘাটে ২৩টি, বাঘায় ২০টি, বাগমারায় ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। এসব ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপিকে) রোগীদের প্রাথমিক সেবা প্রদান করে থাকেন। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিশুরোগের সমন্বিত চিকিৎসাসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা-সংক্রান্ত শিক্ষা ও পরামর্শ, সাধারণ রোগ ও জখমের চিকিৎসাসেবা প্রদান করে। তানোর উপজেলার দেওতলা কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, রোগী নেই। স্বাস্থ্য সহকারী হুমায়ুন জানান, রোগীর সংখ্যা আগের মতো নেই। কারণ সরকারিভাবে সরবরাহ করা ওষুধ শেষ হয়ে যাওয়ায় রোগীকে শুধু ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া জেলা ও সদর হাসপাতাল কাছাকাছি থাকায় অধিকাংশ রোগী এখানে আসেন না। তবে পবা উপজেলার ঘিপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন রোগীর দেখা পাওয়া যায়। এ ছাড়া চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে দেখা গেছে, শুধু ওষুধ নয়; জনবল ও চিকিৎসাসামগ্রী সংকটেও রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামতে বসেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ডিসেম্বরে ২৩ রকমের ওষুধ এসেছে এই কেন্দ্রে। এর পর থেকে সরবরাহ বন্ধ। জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর চরম সংকট আছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি অফিসার নাসিম আহমেদ বলেন, ‘ওষুধের সরবরাহ নেই। আমরা শুধু পরামর্শ দিচ্ছি। রোগীরা বিরক্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছে। আগে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন রোগী আসত। এখন আসছে ১০-১২ জন।’ ভায়ালক্ষ্মীপুর কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা মেহেরুন নেসা বলেন, কয়েক মাস ধরে সেবা নিতে এসে কেউই ওষুধ পায়নি। শুধু প্রেসার আর ওজন মেপে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে। নিমপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট মোস্তাকিন হোসেন বলেন, ওষুধ সরবরাহ একেবারে বন্ধ। এ কারণে রোগী তেমন আসছে না। কনডম, খাবার বড়িসহ জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীও সরবরাহ কম। দম্পতিদের চাহিদার চেয়ে অনেক কম পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে।
পুঠিয়া অঞ্চলের মাঠপর্যায়ের পরিবারকল্যাণ পরিদর্শক বিপাশা খাতুন বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২৩ ধরনের ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। ওষুধের পুরোপুরি জোগান না থাকায় আমরা কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এস আই এম রাজিউল করিম বলেন, ‘বর্তমানে ওষুধের জোগান একটু কম। কবে নাগাদ এ সমস্যা স্বাভাবিক হবে তা আমার জানা নেই।
তবে চেষ্টায় আছি যত দ্রুত বিষয়টি স্বাভাবিক করা যায়। এরই মধ্যে কিছু ওষুধ এসেছে স্যাম্পল হিসেবে। আশা করছি খুব দ্রুত বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।’