কুমিল্লার মুরাদনগরে মা ও ছেলেমেয়েকে গণপিটুনিতে হত্যার দুই দিন পরও মামলা হয়নি। পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে। তবে গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন রাখা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
বৃহস্পতিবার উপজেলার কড়ইবাড়ী বাজারে এক স্কুলশিক্ষকের মোবাইল ফোনসেট চুরির ঘটনা কেন্দ্র করে খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবি (৫৫), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৮) ও মেয়ে জোনাকীকে (৩২) পিটিয়ে হত্যা করে কড়ইবাড়ী গ্রামবাসী। এ সময় আহত হন রুবির আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৪)। তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জানা গেছে, মোবাইল চুরির ঘটনায় সমাজপতিদের অপমান করায় এ হত্যাকা ঘটেছে। পুলিশ জানায়, নিহত তিনজনের বিরুদ্ধে ৩০টিসহ ওই পরিবারের পাঁচজনের বিরুদ্ধে ৫০টি মামলা রয়েছে। অধিকাংশ মামলাই মাদক কেনাবেচা এবং মারামারির ঘটনায় করা। বাঙ্গরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, হত্যাকান্ডের পরই পুলিশ অভিযানে নামে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। নিহতদের স্বজনরা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
হত্যার নেপথ্যে : নিহত রুবি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকলেও হত্যার নেপথ্যে মিলেছে ভিন্ন তথ্য। কড়ইবাড়ী বাজারে গত মঙ্গলবার সকালে কড়ইবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুহুল আমীনের মোবাইল চুরি করে এক কিশোর। বিষয়টি জানাজানি হলে হায়দরাবাদ সড়কের মাথা থেকে কিশোরকে ধরে মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়। কিশোরটি রুবির আত্মীয়। খবর পেয়ে রুবি, তাঁর মেয়ে জোনাকীর স্বামী মনির ও ছেলে রাসেল বাগ্বিন্ডায় জড়ান শিক্ষক রুহুল আমীন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে। এক পর্যায়ে তাঁরা রুহুল আমীন ও বাচ্চুকে মারধর করেন। এগিয়ে এলে রুহুল আমীনের ভাতিজা রবিউল ও ফয়েজকেও মারধর করেন রুবির পরিবারের লোকজন। এমনকি বাড়ি গিয়েও বাচ্চু মিয়া, রবিউল ও ফয়েজকে দ্বিতীয় দফায় মারধর করা হয়। পরিবারটির এমন বেপরোয়া আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে পরদিন বিকালে কড়ইবাড়ী তিন রাস্তার মোড়ে আকবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ একত্র হন এলাকাবাসী। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে রুবির বাড়িতে যান তাঁরা। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে বাচ্চু মিয়াকে চড়থাপ্পড় মারেন রুবি। তখন গ্রামবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে রুবি ও তাঁর মেয়ে জোনাকীকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। খবর পেয়ে ছেলে রাসেল ছুটে এলে তিনিও গণপিটুনিতে নিহত হন। পরে রুবির আরেক মেয়ে রুমা আক্তারকে উদ্ধার করে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায় পুলিশ। আকবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম জানান, নিহত পরিবারের সদস্যরা মাদক কারবারে জড়িত ছিলেন। গ্রামের মানুষের সঙ্গে তাঁরা উগ্র আচরণ করতেন। মোবাইল চুরি কেন্দ্র করে পরিবারের চার সদস্যকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। নিহত রাসেল মিয়ার স্ত্রী মীম আক্তার বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমার শ্বশুর খলিলুর রহমান ও ননদ রিক্তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড । আমি দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
পুরুষশূন্য গ্রাম, কবর খুঁড়ল গ্রামপুলিশ : মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়িতে গণপিটুনিতে নিহত তিনজনের লাশ দাফনের জন্য কবর খুঁড়েছেন গ্রামপুলিশের সদস্যরা। গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকায় পুরুষ না থাকায় গতকাল সন্ধ্যায় নিহতদের জন্য তারা কবর খুঁড়েন।
তারা হলেন আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রামপুলিশ সদস্য খোরশেদ আলম, মামুন মিয়া, প্রফুল্ল চন্দ্র দাস ও স্থানীয় স্বপন মিয়া। ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, কবর খোঁড়া ও দাফনের জন্য আত্মীয়স্বজন এবং স্থানীয় কাউকে পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে গ্রামপুলিশের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে।