দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। বিকৃত মানসিকতার কিছু মানুষের জঘন্য পশুপ্রবৃত্তি সমাজকে শঙ্কিত-লজ্জিত করছে। এদের দৌরাত্ম্য উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। মাগুরার ধর্ষিত শিশু আছিয়ার মৃত্যু নিয়ে গোটা দেশ যখন ফুঁসছে, তখনো ঘটছে ধর্ষণ। সবচেয়ে দুঃখ এবং দুর্ভাগ্যজনক হলো, পরিবার ও পরিপার্শ্বের পরিচিতরাই অবতীর্ণ হচ্ছে ধর্ষকের ভূমিকায়। এ ক্ষেত্রে সৎবাবা, চাচা, মামা, নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীরা চিহ্নিত হচ্ছে। নরপশু দুয়েকজন বাবার বিষয়েও একই অভিযোগ উঠছে! কী লজ্জা! কী লজ্জা!! এই গ্লানিতে জাতির আত্মা সীমাহীন ব্যথিত ও বিব্রত। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, গত আট বছরে ১৮ বছরের কম বয়সি প্রায় পাঁচ হাজার শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে সহস্রাধিক শিশুর বয়স ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। একই সময়কালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৪০ শিশুকে। এর মধ্যে ৩৩ শিশুর বয়স ৬ বছরের কম। ৯৮ জনের বয়স ৭ থেকে ১২। সাভারের আশুলিয়ায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তাদের সৎবাবার বিরুদ্ধে। তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে পঞ্চগড়ে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরকম অসংখ্য ঘটনা আকসার ঘটছে সমাজে। লোকলজ্জার ভয়ে, ধনে-মানে-জনবলে ক্ষমতাবানদের ভয়ে অনেক ঘটনা প্রকাশও পায় না। ধর্ষণ বিকৃতকাম মানুষের প্রবৃত্তি। পরিবার ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রের আইন দিয়ে এ পাশবিক প্রবৃত্তিকে প্রতিরোধ করতে হবে। নারীর পোশাক বা পর্নোগ্রাফিক সহজলভ্যতা ধর্ষণ বৃদ্ধির কারণ বলে যারা চিহ্নিত করতে চান- পরোক্ষভাবে ধর্ষকের পক্ষে সাফাই গাওয়ার এ যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা সবার আগে প্রয়োজন। তারপর এ-সংক্রান্ত আইনের প্রসঙ্গ। ধর্ষণ-সংক্রান্ত আইন পরিবর্তন হচ্ছে। ধর্ষণের শাস্তি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন হতে হবে দ্রুততম বিচার আদালতে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তদন্ত শেষ করতে সক্ষম জনশক্তি তৈরি রাখতে হবে। দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার বাস্তবায়ন এ বিষয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করবে। ধর্ষণ কমবে। সেই কাজটি করুন।