‘এই পৃথিবীর পরে কত ফুল ফুটে আর ঝরে’ গানের দেশাত্মবোধ ধারায় ‘আলোর মিছিল’ (১৯৭৪) মুভিটি অনেকেরই প্রিয়। এই মুভির কারিগর প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা নারায়ণ ঘোষ মিতা। আবদুল জব্বারের কণ্ঠে ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’ গানটি মিতার ‘এতটুকু আশা’ (১৯৬৮) মুভিতে চিত্রায়িত। কিংবা তাঁর ঝুড়িতে রয়েছে সত্তর দশকের অন্যতম দর্শকনন্দিত রোমান্টিক মুভি ‘নীল আকাশের নীচে আমি রাস্তায় চলেছি একা’ গানসংবলিত রাজ্জাক-কবরী অভিনীত ‘নীল আকাশের নীচে’ (১৯৬৯)।
রুচিশীল চলচ্চিত্র নির্মাণে দেশীয় চলচ্চিত্রে এ নির্মাতার নাম ওপরের দিকেই থাকবে। চলচ্চিত্রে আসার আগে ঢাকায় মঞ্চনাটকের সঙ্গে নাট্যকার ও অভিনেতা হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জনপ্রিয় ও আলোচিত নাটক ‘জল্লাদের দরবার’-এ অভিনয় করেছিলেন মিতা। নিজের নির্মিত ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘কাঁচের স্বর্গ’, ও ‘তৃষ্ণা’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান শুরু হয়। ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রের জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারেই শ্রেষ্ঠ প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জনের সৌভাগ্যবান ব্যক্তি হলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা। তিনি একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, পরিবেশক ও চিত্রনাট্যকার ছিলেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবেশক সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘চাওয়া পাওয়া’ মুক্তি পায় ১৯৬৭ সালে। তাঁর নির্মিত অন্য চলচ্চিত্রগুলো হলো- এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, ক খ গ ঘ ঙ, দীপ নিভে নাই, এরাও মানুষ, আলোর মিছিল, লাঠিয়াল, তৃষ্ণা, অলংকার, চোখের মণি, জীবন মৃত্যু, সুখের সংসার, তাসের ঘর, মান অভিমান, সাহেব, সুদ আসল, হারানো সুর, সাজানো বাগান প্রভৃতি।
সৃজনশীল, প্রতিভাবান এই চলচ্চিত্র নির্মাতা একসময় বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের পশ্চিম বাংলার কলকাতায় চলে যান এবং সেখানেও কয়েকটি ছবি পরিচালনা করেন। পারিবারিক ও সামাজিক গল্পের বাণিজ্য সফল ছবির গুণী নির্মাতা ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা। তাঁর নির্মিত প্রতিটি চলচ্চিত্রই আলোচিত, প্রশংসিত ও জননন্দিত হয়েছে। হয়েছে ব্যবসাসফল। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের অবিস্মরণীয় নির্মাতা নারায়ণ ঘোষ মিতা তাঁর সৃজনশীল চলচ্চিত্র কর্মের মাধ্যমে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বাংলা ভাষাভাষী চলচ্চিত্রামোদীদের কাছে।
অজানা এক নীরব অভিমানে বুকভরা ব্যথা আর কষ্ট নিয়ে খ্যাতিমান পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা দেশ ছেড়েছিলেন। তিন পুত্র ও এক কন্যাসন্তানের জনক তিনি। সামাজিক ছবির জননন্দিত নির্মাতা মিতা ২০০২ সালের ৩ মার্চ ৭০ বছর বয়সে ভারতের কলকাতায় পরলোকগমন করেন। তিনি ১৯৩২ সালের ২৪ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।