জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। টানা তিন দিন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচির পর গতকাল শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে বলে ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে তিনি এই ঘোষণা দেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন বাজেট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ বৃদ্ধি করে শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আবাসন সংকট নিরসনে দ্রুত অস্থায়ীভাবে নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। পরে অনশনরত শিক্ষার্থীদের পানি পান করানো হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‘আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের স্বার্থ দেখি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। আমরা সারা দিন এটা নিয়ে কাজ করেছি। ইউজিসি একটি পরিবার হিসেবে সবাই মিলে এটার সমাধান করতে পারব। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি একসঙ্গে বসে সব সমাধান করব। আপনাদের সব দাবি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি।’
এ সময় জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের চতুর্থ দাবি ছিল আমাদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। হামলার ঘটনায় পুলিশ দুঃখ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া সাত দিনের মধ্যে হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেবে বলে জানানো হয়েছে। সরকার আমাদের সব দাবি মেনে নিয়েছে।’ এর আগে শিক্ষার্থীদের দেওয়া তিন দফা দাবি হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি চালু করা, জবির প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ একনেক সভায় পাস ও বাস্তবায়ন। নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে বুধবার দুপুরে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাস থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে ‘লংমার্চ’ শুরু করেন। মিছিলটি গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট, সচিবালয়, শিক্ষা ভবন, হাই কোর্ট ও মৎস্য ভবন মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়লেও তা উপেক্ষা করে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসে। একপর্যায়ে সেই মিছিল প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে এলে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরে ওই দিন বিকালে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা যমুনায় যান। সেখানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ শিক্ষক প্রতিনিধিরা। বৈঠক শেষে উপদেষ্টা কথা বলতে আন্দোলনস্থলে এলে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে ছুড়ে মারা একটি বোতল উপদেষ্টার মাথায় লাগে। মাথায় আঘাতের পরে মাহফুজ বলেন, ‘আপনাদের অপকর্মের মাধ্যমে আপনারা পুলিশের অবস্থানকে ন্যায্যতা দিলেন।’
আন্দোলনকারীদের দাবি সরকার বিবেচনা করছে জানিয়ে তিনি আন্দোলনস্থল ত্যাগ করেন। সরকারের তরফে দাবি পূরণের কোনো প্রতিশ্রুতি না আসায় আন্দোলনকারীরা রাতভর কাকরাইল মসজিদ মোড়ের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
এরপর বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদদীন ফেসবুক লাইভে এসে আন্দোলনে যোগ দিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে দিনভর অন্তত ৪০টি একতলা ও দোতলা বাসে করে শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে আসেন। আর শিক্ষকদের অন্তত আটটি মিনিবাস ঘটনাস্থলে আসে। দিনভর অবস্থান করে কোনো ফল না আসায় রাতে বৈঠক করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৈঠক শেষে রাত ১২টার দিকে গণ-অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন অধ্যাপক রইছ উদদীন। সেই সঙ্গে দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন। গতকালও সকাল থেকে দিনভবর আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘোষণায় অনশন ভাঙলেও কেউ কেউ প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে সরকারি লিখিত ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যান।