নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে দুই নারী ও এক শিশুর খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার ইয়াসিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শনিবার বিকেলে গ্রেফতার ইয়াছিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হলে আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল কাইউম খান।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার বিকেল ৩টায় মিজমিজি পশ্চিমপাড়া বড়বাড়ি পুকুরপাড় এলাকায় মাটির নিচে পুঁতে রাখা লামিয়া (২২), স্বপ্না (৩৪) ও লামিয়ার শিশুপুত্রের (৪) খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দুই নারী সম্পর্কে আপন বোন। পারিবারিক কলহের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। মরদেহ উদ্ধারের সময় লামিয়ার স্বামী ইয়াসিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে, এ ঘটনায় শুক্রবার গভীর রাতে নিহত লামিয়া ও স্বপ্নার বোন মুনমুন আক্তার বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আসামিরা হলেন, লামিয়ার স্বামী ইয়াসিন, শ্বশুর মো. দুলাল (৫০) ও তার ননদ মোসা. শিমু (২৭)। মামলার এজাহারেও পারিবারিক কলহের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল কাইউম খান বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে দুই নারী ও এক শিশুকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার আসামি ইয়াছিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শনিবার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেলায়েত হোসেনের আদালতে ত্রিপল মার্ডারের ঘটনায় ইয়াসিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশদিনের রিমান্ড আবেদন করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ইয়াসিনের সঙ্গে পাঁচ বছর পূর্বে লামিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পর হতেই লামিয়ার শ্বশুর ও ননদ প্রায় সময় তাকে মারধর করতো। বিয়ের পরে লামিয়া-ইয়াসিন দম্পতির একটি পুত্রসন্তান হয়। ইয়াসিন মূলত মাদকাসক্ত। বিয়ের পর থেকে স্ত্রী-সন্তানের কোনো ভরণপোষণ দিতো না সে। বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া ও মারামারি হতো।
এ কারণে লামিয়া তার ছেলে আব্দুল্লাহ ও বড় বোন স্বপ্নাকে নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া বড়বাড়ি পুকুরপাড় এলাকায় মোক্তার হোসেনের বাড়িতে আলাদা ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। লামিয়া সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকার মুজিব ফ্যাশন গার্মেন্টসে হেলপার হিসাবে চাকরি করতেন।
এদিকে, ইয়াসিন প্রায় সময় সেই বাড়িতে গিয়ে লামিয়ার কাছে টাকা দাবি করতেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। দাবিকৃত টাকা না দিলে ইয়াসিন শারীরিক নির্যাতনসহ হত্যার হুমকি দিতেন।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়ও, গত ৭ এপ্রিল দুপুরে মুনমুন আক্তার ও তার স্বামী লামিয়াদের ভাড়াটিয়া বাসায় গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে আসেন। তাদের বাসা থেকে আসার পর থেকে লামিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তাদের খোঁজ নেওয়ার জন্য সেই বাড়িতে গিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি। স্বজনসহ বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি তাদের। পরে শুক্রবার দুপুরে লামিয়াদের ভাড়া বাড়ির সামনে রাস্তার পাশ থেকে গর্ত করে পুঁতে রাখা তাদের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লামিয়া ও স্বপ্নার মাথা হতে দেহ ও দুই পা দ্বিখণ্ডিত ছিল। আর শিশু আব্দুল্লাহর গলায় কালো সুতা দিয়ে পেঁচানো ছিল।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহিনুর আলম বলেন, দুই নারী ও এক শিশুর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ইয়াছিনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতার ইয়াছিনকে জিজ্ঞাবাদের জন্য শনিবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/কেএ