ট্যুরিস্ট ভিসার আড়ালে মানব পাচারে সক্রিয় একটি আন্তর্জাতিক চক্রের সন্ধান মিলেছে বরিশালে। ইতালি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে চক্রটি ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশি তরুণদের লিবিয়ায় পাচার করছে। সেখানে নিয়ে তাদের আটক রেখে চলছে ভয়াবহ মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। মুক্তিপণের টাকা না পেলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে দালালরা।
এই ভয়ংকর প্রতারণার শিকার হয়েছেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার তিলেরচর গ্রামের আমিনুল ইসলাম। তিনি দেশে ফিরে মানব পাচারকারী চক্রের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আমিনুলের তথ্যমতে, শুধু লিবিয়ার বেনগাজিতেই বাংলাদেশের অন্তত ২৫০ তরুণ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ওই আড়াই শ জন ছাড়াও গৌরনদীর একটি দালাল চক্রের ফাঁদে লিবিয়ার বেনগাজি উপকূলে আটকা রয়েছে গৌরনদীর ৬০, আগৈলঝাড়ার ১০ জনসহ মাদারীপুর, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ ও ঢাকার আরও ৩৮ জন। আমিনুল জানান, একটি ক্ষুদ্র ঋণদান প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তিনি। ইতালি যাওয়ার প্রলোভনে সাড়া দিয়ে ২০২৫ সালের জুলাইয়ে ট্যুরিস্ট ভিসায় সৌদি আরব ও মিসর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজি পৌঁছান। সেখানে গিয়ে দেখেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আরও শতাধিক যুবক দালালদের ফাঁদে পড়ে বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। পরে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন আমিনুল। অন্যদিকে গৌরনদীর ইতালি প্রবাসী জাকির মোল্লার প্রলোভনে পড়ে ১০৮ জন তরুণ এখনো লিবিয়ায় আটকা। প্রত্যেকে ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন চক্রটিকে। সৌদি আরবে ওমরাহ ভিসায় নিয়ে গিয়ে পরে ট্যুরিস্ট ভিসায় মিসর হয়ে তাদের লিবিয়ায় পাঠানো হয়। তিনটি স্পিডবোটে পাচারের সময় ১০ জনকে আটক করে লিবিয়ার কোস্টগার্ড। পরে ১২ লাখ টাকা দিয়ে তিনজনকে মুক্ত করা হলে পুরো ঘটনাটি প্রকাশ পায়।
ভুক্তভোগীদের স্বজনরা দালালদের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ করলেও মামলা করতে ভয় পাচ্ছেন অনেকে। কারণ, মামলা করলে লিবিয়ায় থাকা স্বজনদের জীবন আরও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
বরিশাল মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী তুহিন মোল্লা জানান, ট্যুরিস্ট ভিসায় প্রতারণার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০-১২টি মামলা হয়েছে। তবে অধিকাংশ আসামি বিদেশে থাকায় বিচার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে বরিশাল জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক এ কে এম সাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, ওয়ার্ক ভিসায় যাত্রাকারীদের তথ্য অফিসে থাকে, কিন্তু ট্যুরিস্ট ভিসায় যাওয়া ব্যক্তিদের কোনো তথ্য আমাদের কাছে থাকে না। পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি, লিবিয়ায় ট্যুরিস্ট ভিসায় এ অঞ্চলের অনেক মানুষ গেছে। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভালোভাবে জানে।