বিশ্ব চলচ্চিত্রে দেখা যায় জাতি-ধর্ম সম্প্রদায়ের ভাষা সমাজ সংস্কৃতিভিত্তিক চলচ্চিত্র বিরল। বাংলাদেশে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তেমন চলচ্চিত্র তৈরি পর্যাপ্ত নয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এমন বিষয়ের চলচ্চিত্রের সমাদর যথার্থ। এ বিষয়ে আমাদের পুরান ঢাকার রয়েছে হাজার বছরের বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য সংস্কৃতি ভাষা ও ধর্মবিশ্বাসীদের সহাবস্থানের গৌরবোজ্জ্বল চিত্র। পুরান ঢাকা সুন্নি-শিয়া, কাদিয়ানী, ওয়াহাবি, হিন্দু, ব্রাহ্মণ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসী ও বৈচিত্র্যময় ভাষার মানুষের বসবাস। এসব নিয়েই তৈরি হবে চলচ্চিত্র ‘ঢাকাইয়া দেবদাস’। এটি শুধু একটি প্রেমকাহিনি নয়, এতে থাকবে পুরান ঢাকার মানুষের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতির সমাজ সংগীত বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক নানান সংস্কার সাকরাইন, বাংলা নববর্ষ, পবিত্র শবেবরাত, রমজান মাসের পবিত্রতার ঐতিহ্য, ঈদের মহিমা, নানান সম্প্রদায়ের জীবন আচরণ সংগীত। কাসিদা, কাওয়ালি, মেরাসানদের গান, একই সঙ্গে থাকবে শিয়া সম্প্রদায়ের পবিত্র মহররম মাসের কারবালার শোক পালনের বিভিন্ন কালচার- আশুরা ও তাজিয়া মিছিল। আরও থাকছে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা পার্বণে নানান উৎসব ও তাদের পারস্পরিক ব্যবসাবাণিজ্যে রয়েছে হালখাতা উৎসব। রয়েছে পারিবারিক জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ-জন্মদিনসহ সামাজিক ও পারিবারিক কৃষ্টি কালচার। এই সমাজ মানুষ ও সংস্কৃতিকে স্পর্শ করে এগিয়ে যাবে একটি প্রেমকাহিনি। পুরাতন শহরের অলিগলি দোকানপাট, ছোট পুকুর, খেলার মাঠ, পার্ক, মহল্লায় মহল্লায় পঞ্চায়েতের বিচার কালচার। থাকছে মান-অভিমান, ঝগড়া-বিবাদ প্রতিক্রিয়ায় প্রেম ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, প্রিয়ভাজন ঐক্য সম্প্রীতি। ঢাকাইয়া মানুষের যৌথ পরিবারের বিচিত্র বর্ণময় জীবন এবং এর ভাঙন। চলচ্চিত্রটি আগামী জানুয়ারি মাসে পুরান ঢাকার ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব সাকরাইন দিয়ে শুটিং যাত্রা শুরু হবে এবং আজ সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক শুভ মহরত হতে যাচ্ছে ‘ঢাকাইয়া দেবদাস’-এর। অভিনয়ে থাকছেন বুবলী, আদর আজাদ, তারিক আনাম, শহীদুজ্জামান সেলিম, মামুনুর রাশেদ অপু, মনিরা মিঠু, রোজী সিদ্দিকী, দীপা খন্দকারসহ আরও বিজ্ঞ শিল্পীজন। চলচ্চিত্রটি নির্মিত হচ্ছে এক্সেল ফিল্ম এবং রেভুলেশন মুভিজ ইন্টারন্যাশনালের ব্যানারে। আর মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। ‘ঢাকাইয়া দেবদাস’-এর কাহিনি ও চিত্রনাট্য তৈরিতে শায়লা পারভীনের রচিত গবেষণা ও সংগৃহীত লোকাচার সংগীতের পুস্তক থেকে ‘ঢাকাইয়া দেবদাস’ উনিশ-বিশ শতকে পুরান ঢাকার সমাজ ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়েছে। কাহিনি চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয় একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে আর সেই চলচ্চিত্র যদি হয় মানুষ, সমাজ ও সংস্কৃতিনির্ভর। ‘ঢাকাইয়া দেবদাস’ একটি পুরান ঢাকার সমাজ ও সংস্কৃতির হারিয়ে যাচ্ছে এমন সব কৃষ্টি কালচারকে তুলে ধরা হবে। এ চলচ্চিত্রের বিচুয়েল ও কালচার বিশ্ব চলচ্চিত্রে সমৃদ্ধি অর্জন করবে বলে আমার বিশ্বাস। পুরান ঢাকার মানুষের সুখ-দুঃখ, জীবনযাত্রা, পারিবারিক বন্ধন সম্পর্কের আলোকে সমাজ ও সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ঢাকাইয়া দেবদাস’।
লেখক : চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক