গণভোট ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারিসহ পাঁচ দফা আদায়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি রাজনৈতিক দল। গতকাল জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় গিয়ে এ স্মারকলিপি জমা দেন। সেখানে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এর আগে গতকাল সকালে মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকায় জড়ো হন জামায়াতসহ আট দলের নেতা-কর্মীরা। তারা পদযাত্রা নিয়ে পল্টন মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সেখান থেকে স্মারকলিপি জমা দিতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যমুনার দিকে পদযাত্রা শুরু করেন আটটি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। মৎস্য ভবন এলাকায় পৌঁছালে পদযাত্রাটি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ অবস্থায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলসহ আট দলের প্রতিনিধিরা স্মারকলিপি দিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যান। পাঁচ দফা দাবি আদায়ে একজোট হওয়া আটটি দল হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)।
তাদের পাঁচ দাবি হলো- জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও ওই আদেশের ওপর নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে বা উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা এবং ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের সব জুলুমনির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
এদিকে পল্টনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না করলে আপনি (প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) মর্যাদা হারাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘আপনি ঐকমত্য কমিশনের প্রধান, আপনি সরকারপ্রধান। আপনি এক্ষুনি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করুন। যদি আপনি না করেন, যে সম্মান অর্জন করেছেন, আপনার মর্যাদা আপনি নষ্ট করবেন।’ জাতীয় নির্বাচনের আগে চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার কাজ শুরুর আহ্বান জানিয়ে পরওয়ার বলেন, ‘আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) নিজেই গণআকাক্সক্ষার প্রতি সম্মান জানিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেছিলেন এবং সব রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবকে একমত করার জন্য ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছিলেন। আপনি ঐকমত্য কমিশনের প্রধান হিসেবে সরকারেরও প্রধান।’
আর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করব। ঘি আমাদের লাগবেই। তিনি বলেন, ‘আপনারা চালাকি শুরু করেছেন। আপনাদের চালাকি আমরা বুঝি। আপনারা চালাকি করলেও আমরা তার প্রতিবাদে আমাদের দাবি আদায় করার পন্থা আবিষ্কার করব। আমরা এখন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে যাচ্ছি, সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে আঙুল বাঁকা করব। ঘি আমাদের লাগবেই।’