পেট্রিয়াকা নিজের পরিবার, দেশ, ধর্ম ছেড়ে বেছে নেন গ্রামীণ জীবন। নাম বদলে হন জেসমিন আক্তার। রাধাকানাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন। পেট্রিয়াকাকে নির্বাচিত করে তার প্রতি ভালোবাসারই প্রকাশ ঘটায় সবাই...
ধর্ম, মা-বাবা, দেশ ছেড়ে প্রেমের টানে ফিলিপাইন থেকে আরও ১৫ বছর আগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় চলে আসেন জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা। উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নের অজোপাড়া গাঁয়ের তরুণ জুলহাস উদ্দিনের প্রেমে মজেছিলেন তিনি। আর বিয়ের পর জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা থেকে নাম বদলে হয়ে যান জেসমিন আক্তার। সেই জেসমিন আক্তার এখন জনপ্রতিনিধি। রাধাকানাই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের ইউপি সদস্য। ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে মাইক প্রতীকে এই ইউপি সদস্য পেয়েছিলেন ৪ হাজার ৪৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ১ হাজার ৮৩৭ ভোট পেয়েছিলেন। নারী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই চাঞ্চল্য তৈরি হয় গোটা দেশজুড়ে। জানা যায়, রাধাকানাই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ এই তিনটি ওয়ার্ডে প্রায় ১২ হাজার মানুষের বসবাস। জনপ্রতিনিধি হিসেবে জেসমিন আক্তার মেধা, শ্রম ও ঘাম দিয়ে সেখানকার মানুষের সেবা করছেন এমনটাই জানিয়েছেন ২ নং ওয়ার্ডের সাব্বির আহমেদ। ইউপি সদস্য জেসমিন আক্তারকে এলাকার বিভিন্ন কাজের জন্য প্রায়ই উপজেলা পরিষদের সামনে দেখা যায়। তিনি তাঁর নির্বাচিত এলাকার মানুষের প্রতি যথেষ্ট দায়িত্বশীল। তাঁর স্বামী জুলহাস উদ্দিন জানান, ‘বর্তমানে তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দুই সন্তানই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। তিনি আরও জানান, বিয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত ফিলিপাইন যাইনি আমরা কেউ। আমাদের দেশটাকে জেসমিন অনেক আপন করে নিয়েছে। গ্রামের মানুষ আর পরিবার নিয়েই তার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন।’ স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশে এসে এ দেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার পর বাংলা বলতে না পারা পেট্রিয়াকা ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়েছেন এ ভাষায়। বাংলায় কথা বলতে শিখে জয় করেছেন সবার মন। পরিবার আর এলাকার মানুষের অনুপ্রেরণায় রাধাকানাই ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। আর পেট্রিয়াকাকে নির্বাচিত করে তার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটায় সবাই। জানা যায়, ২০০৮ সালে ফিলিপাইনের মিন্দানাও স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পেট্রিয়াকা ফিশারিজ বিভাগে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এরপর চাকরিতে যোগ দেন সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানিতে। সেখানেই চাকরি করতেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার জুলহাস। সে সময় জুলহাসের সঙ্গে পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বছর দুয়েক পরে নিজেদের দেশে ফিরে যান তারা। তবে তাদের মধ্যে চলতে থাকে যোগাযোগ। সিদ্ধান্ত নেন বিয়ের করার। ২০১০ সালের শেষের দিকে জুলহাস পাড়ি জমান ফিলিপাইনে। সেখানে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পেট্রিয়াকা স্বামীর সঙ্গে চলে আসেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার অজোপাড়াগাঁয়ে। নিজের পরিবার, দেশ, ধর্ম ছেড়ে বেছে নেন এই গ্রামীণ জীবন। তারপর নাম বদলে হন জেসমিন আক্তার।