গোপালগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ব্রোঞ্জের গয়না ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি সনদ পেয়েছে। এটি জেলার দ্বিতীয় পণ্য হিসেবে ভৌগোলিক নির্দেশকের স্বীকৃতি অর্জন করল। এর আগে গোপালগঞ্জের রসগোল্লা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছিল।
এ স্বীকৃতিতে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়নার ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। ব্রোঞ্জশিল্পভিত্তিক অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘ব্রোঞ্জ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের পেশাগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করব। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ও বিসিকের মাধ্যমে ব্রোঞ্জ শিল্পের কারিগরদের মানসম্মত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ শিল্পে উৎপাদিত গয়না বিপণনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জের ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে এ পণ্যের আউটলেট স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে এ শিল্পকে যুগোপযোগী করা হবে।’ জেলা প্রশাসক জানান, গত বছরের ১২ মার্চ মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়নার জিআই পণ্যের স্বীকৃতি চেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট শিল্প মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোতে আবেদন করা হয়। পরে যাচাই-বাছাই করে ওই বছরের ১০ জুলাই জিআই পণ্য হিসেবে ব্রোঞ্জের গয়না নিবন্ধনের জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩-এর ধারা ১২ অনুসারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর কর্তৃক জার্নাল প্রকাশিত। গত ৩০ মে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামানের হাতে ব্রোঞ্জ গয়নার জিআই সনদ তুলে দেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ব্রোঞ্জ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও জলিরপাড় ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সুভাষ বৈদ্য বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডেই ব্রোঞ্জের গয়না তৈরির পল্লী প্রায় ১০০ বছর আগে গড়ে ওঠে। পরে এটি সারা জলিরপাড় ইউনিয়নের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ পল্লীকে কেন্দ্র করে এখানে ব্রোঞ্জ মার্কেট প্রতিষ্ঠিত হয়। জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়নার সুখ্যাতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এটি বিদেশের বাজার দখল করে নেয়। কিন্তু এ শিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়না তৈরি শিল্পের সুবাদে সগৌরবে শতাধিক পরিবার টিকে রয়েছে। জলিরপাড় ব্রোঞ্জ মার্কেটে এখনো ৪৫টি ব্রোঞ্জের দোকান রয়েছে।’ ব্রোঞ্জের গয়না প্রস্তুতকারক জলিরপাড় গ্রামের জগদীশ কর্মকার বলেন, ‘ব্রোঞ্জের গয়না তৈরির তামা, দস্তা ও পিতলের দাম বেড়েছে। সহজপ্রাপ্যতা কমেছে। চীন, ভারতসহ অন্যান্য দেশের ব্রোঞ্জ গয়নার রং খুব চকচকে। আমাদের গয়নার রং তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। আমাদের মানসম্পন্ন কারিগর রয়েছেন। আধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে তাদের কাজে লাগিয়ে আমরাও কারুকাজখচিত ব্রোঞ্জের গয়না তৈরি করতে পারি। এমন ব্যবস্থা করা হলেই শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ীরা অধিক উপার্জন করতে পারবেন। এ শিল্প দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ এবং গতিশীল করবে।’