আহাম্মদ উল্লাহ একজন স্বপ্নবাজ তরুণ। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তাঁর টান। চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন নয়; ক্রিকেট নিয়ে আগামীর স্বপ্নে বিভোর তিনি। গ্রামের মাঠেই বল-ব্যাট নিয়েই ক্রিকেটে তাঁর হাতেখড়ি। নৈপুণ্যের পর নৈপুণ্যে পর্তুগাল জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁর সাফল্যে দেশটিতে মুখে মুখে ছড়িয়েছে বাংলাদেশের নাম। আহাম্মদ উল্লাহর জন্মস্থান কুমিল্লার লাকসাম। তিনি লাকসাম পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিনই গ্রামের সাবেক মেম্বার মরহুম আলী নোয়াবের ছোট ছেলে। তাঁর বাবা একসময়ের ভালো ফুটবলার। পরিবারের প্রায় সবাই ক্রীড়াপ্রেমী। সেই সূত্র ধরে শৈশব থেকেই তিনি গ্রামীণ জনপদে ক্রিকেটে সাফল্য দেখান। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি একজন দক্ষ ‘বোলার’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়, ফিটনেস আর বোলিং প্র্যাকটিস তাঁর নিয়মিত রুটিন। আহাম্মদ উল্লাহ ২০০৮ সালে কুমিল্লা মডার্ন স্কুলের ক্রিকেট টিম থেকে অনূর্ধ্ব ১২, ১৪, ১৬ ও ১৮ চট্টগ্রাম ডিভিশনে খেলে সুনাম অর্জন করেন। কুমিল্লা মডার্ন হাইস্কুল থেকে এসএসসি ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও অনার্স শেষ করেন। জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন থাকলেও একসময় উচ্চশিক্ষার জন্য ক্রোয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানেও ক্রিকেটে সবার নজর কাড়েন। ক্যারিয়ারে ‘মিস্ট্রি স্পিনার’ দিয়ে শুরু হয় তাঁর পথচলা। ২০২০ ও ২০২১ সালে উচ্চশিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি ক্রোয়েশিয়ার ‘জাগ্রেব সকল ক্লাব’ ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেন। সেই সময় ক্রোয়েশিয়ার ক্রিকেট দলের নিয়মিত জনপ্রিয় ‘ফাস্ট বোলার’ হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে ইউরোপীয় ক্রিকেট টিমে খেলে একাধিকবার জয় এনে দিয়েছেন। পেয়েছেন ‘সেরা বোলার’ হিসেবে পুরস্কার। প্রত্যেক ম্যাচে নিজের বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। পাশাপাশি খেলেছেন স্পেনিশ লিগও। এরপর থেকে শুরু হয় তাঁর পর্তুগাল মিশন। খেলেন ইউরোপিয়ান বড় টুর্নামেন্ট ক্রিকেট লিগ ইসিএল। ২০২২ সালে স্পেনের মালাগাতে, ২০২৩ সালে খেলেন স্পেনের বার্সেলোনার কয়েকটি ক্লাবে, ২০২৪ সালে নেদারল্যান্ডসের পাঞ্জাব সিসিতে, খেলেন একাধিকবার ইউকের এমসিসির বিপক্ষে পর্তুগালের হয়ে। এ ছাড়াও চার বছর ধরে তিনি ইউরোপিয়ান লিগে অংশগ্রহণ করেন। বিদেশের মাটিতে সাফল্যের দ্যুতি ছড়ানোর ধারাবাহিকতায় আহাম্মদ উল্লাহ বর্তমানে পর্তুগালের জাতীয় টিমের খেলোয়াড় হিসেবে মাঠ কাঁপাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ইউকের এমসিসির সঙ্গে। ক্রিকেট নৈপুণ্যে অর্জন করেছেন একাধিক স্বর্ণপদক মেডেল, তিনটি সিলভার মেডেল, তিনটি ব্রোঞ্জ মেডেলসহ অসংখ্য পুরস্কার। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও করছেন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। আহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘পর্তুগাল জাতীয় ক্রিকেট টিমে স্থান পাওয়া আমার জন্য গর্বের বিষয়। মাঠে ও মাঠের বাইরে পুরো টিমের অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। মাঠে নামলে নিজের সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার চেষ্টা করি। দেশমাতৃকার প্রয়োজনে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট টিমে সম্পৃক্ত হতে পারলে সেরাটুকু উজাড় করে দেব।’
আহাম্মদ উল্লাহর বড় ভাই মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘ছোট ভাইর দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন থাকলেও তা এখনো পূরণ হয়নি। এখন সে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পর্তুগালের জাতীয় দলে সম্পৃক্ত হয়ে দেশেরই মুখ উজ্জ্বল করছে। এতেই আমরা গর্ববোধ করি।’