ইসরায়েলের একজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরানের ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বাহিনীর হামলার পরও সেখানকার গহিনে লুকানো সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ভবিষ্যতে পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করতে পারে তেহরান। তবে সেই চেষ্টা কঠিন হবে এবং এরকম কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আবারও সামরিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন ওই কর্মকর্তা।
ওয়াশিংটনে মার্কিন সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে নাম প্রকাশ না করেই ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, জুন মাসে মার্কিন বাহিনীর ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এর মাধ্যমে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। ইসফাহান, ফোরদো এবং নাতাঞ্জে চালানো এই আক্রমণে স্থাপনাগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে।
বিশেষত, ইসফাহানে সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হানা হয়। ইসরায়েলের দাবি, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বড় একটি অংশ ইসফাহানের নিচে নিরাপদভাবে সংরক্ষিত ছিল, যা এখনও ইরান পুনরুদ্ধার করতে পারে।
তবে তিনি জানান, এই ইউরেনিয়াম পুনরুদ্ধারের যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা খুবই কঠিন এবং দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণে তা ধরা পড়বে বলেই মনে করছেন ইসরায়েলি গোয়েন্দারা।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, এই হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি অন্তত দুই বছর পিছিয়ে গেছে। তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তুলনামূলকভাবে আরও সতর্ক মত পোষণ করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা বারবার দাবি করে আসছেন, এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আন্না কেলি এক বিবৃতিতে বলেন, অপারেশন মিডনাইট হ্যামার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে।
তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার একটি ফাঁস হওয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ঠিকই, তবে সেগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। বিশেষ করে, ফোরদো এবং নাতাঞ্জের কিছু অংশ এখনও অক্ষত রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, হামলায় স্থাপনাগুলোর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে, তবে কিছু কাঠামো এখনো দাঁড়িয়ে আছে। স্পষ্ট করে বললে, বলা যায় না যে সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়েছে।
এই ঘটনার পর তেহরানের পক্ষ থেকে প্রথমবার মুখ খুলেছেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ পেজেশকিয়ান। কনজারভেটিভ রাজনৈতিক বিশ্লেষক টাকার কার্লসনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হামলায় আমাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বর্তমানে আমরা সেখানে কোনো কার্যক্রম চালাতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, সেই ক্ষয়ক্ষতির পুরো মাত্রা আমরা এখনও নিরূপণ করতে পারিনি। ইরানের দাবি, তারা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে, এবং পরমাণু অস্ত্র তৈরির কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল