মুমিনের অন্যতম গুণ হলো নম্র-ভদ্র হওয়া। কেননা ভদ্রতা মানবজীবনের এক মৌলিক গুণ, যা মানুষের অন্তর ও বাহ্যিক আচরণ উভয়কেই সুন্দর করে তোলে। ইসলামের দৃষ্টিতে আদব শুধু সামাজিক সৌজন্য নয়, বরং এটি প্রকৃত ঈমানেরই পরিচায়ক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদের সম্বোধন করে তখন তারা বলে ‘সালাম’। (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬৩)
ভদ্রতা মানুষের চিন্তা, আচরণ ও নৈতিকতার গভীরতম প্রতিফলন। ইসলামের সূচনা থেকেই আল্লাহ তাআলা মানুষকে আদব ও শালীনতার শিক্ষা দিয়েছেন। মহানবী (সা.)-এর ভদ্রতা ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে বহু মানুষ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে।
আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত।’
(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
এই আয়াত স্পষ্ট করে দেয়, সুন্দর ব্যবহারই মানুষকে একত্র করে রাখে, আর খারাপ ব্যবহার সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে।
‘আদব’ বা ভদ্রতার অর্থ হচ্ছে এমন আচরণ, যা প্রশংসনীয় ও শোভন। এটি কথাবার্তা, আচরণ, পোশাক, চলাফেরা এবং অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়।
একজন শিক্ষিত ব্যক্তি তখনই প্রকৃত অর্থে ‘সুশিক্ষিত’, যখন তার জ্ঞানের সঙ্গে ভদ্রতা ও বিনয় যুক্ত থাকে। এ জন্য মহানবী (সা.) তাঁর সাহাবিদের বিনয়ী ও ভদ্র হওয়ার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করতেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইয়াদ ইবনে হিমার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার নিকট ওহি পাঠিয়েছেন, তোমরা পরস্পর বিনয়ী হও, এমনকি একে অপরের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করবে না, একে অপরের সামনে অহংকার করবে না। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ। আপনার কি মত, কেউ যদি আমাকে আমার চেয়ে কম মর্যাদাসম্পন্ন লোকদের মজলিসে গালি দেয় এবং আমিও তার প্রতিউত্তর করি, তবে তাতে আমার গুনাহ হবে? তিনি বলেন, যারা একে অপরকে গালি দেয় তারা উভয়ই শয়তান, উভয়ে বাজে কথা বলে এবং উভয়ে মিথ্যুক।
(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৪২৯)
আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি আদব
আদব শুধু মানুষের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়; এটি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গেও সম্পর্কিত। আল্লাহর প্রতি আদব মানে হলো তাঁর নির্দেশ মান্য করা, কৃতজ্ঞ থাকা এবং পাপ থেকে বিরত থাকা। মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি আদব মানে হলো তাঁর বাণীকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করা এবং তাঁর নির্দেশের সামনে নিজের মতামতকে নিচু রাখা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নবীর আওয়াজের ওপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু কোরো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চৈঃস্বরে কথা বলো, তার সঙ্গে সে রকম উচ্চৈঃস্বরে কথা বোলো না। এ আশঙ্কায় যে তোমাদের সব আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না।’
(সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ২)
এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মহানবী (সা.)-এর সম্মান রক্ষা ঈমানের অংশ, এতে ত্রুটি হলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
মানুষের সঙ্গে ভদ্রতা
ইসলাম সামাজিক জীবনে পরস্পরের প্রতি ভদ্রতা, সহানুভূতি ও সম্মান প্রদর্শনকে অপরিহার্য করেছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘মানুষের সঙ্গে সুন্দর কথা বলো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৮৩)
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৯)
তিনি আরো বলেছেন, ‘যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নীরব থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৭)
মানুষের সঙ্গে ভদ্রতা প্রদর্শনের অন্যতম রূপ হলো সালাম দেওয়া, কারো ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি চাওয়া, বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করা এবং কনিষ্ঠদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা ইত্যাদি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই মহৎ গুণ লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন