সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে আবারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
তিনি বলেছেন, ‘ভারত যদি সিন্ধু নদের পানি স্থায়ীভাবে আটকে রাখার পরিকল্পনা করে, তাহলে তাদের এমন শিক্ষা দেব যে, কখনো ভুলবে না।’ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে ইসলামাবাদে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান থেকে তিনি এই হুমকি দেন।
শাহবাজ বলেন, ‘আমি শত্রুদের পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমাদের পানির এক ফোঁটাও কাউকে ছিনিয়ে নিতে দেব না। যদি আপনারা আমাদের পানি আটকে রাখার পরিকল্পনা করেন এবং এ-সংক্রান্ত কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে আপনাদের উচিত শিক্ষা দেব। এমন শিক্ষা দেব, যা কখনো ভুলবেন না।’ চলতি বছরের ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের পেহেলগাঁওয়ে হামলায় ২৫ ভারতীয় এবং এক নেপালি পর্যটক নিহত হন। ভারতের অভিযোগ, ওই হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত ছিল, তবে পাকিস্তান বরাবরই এই অভিযোগ নাকচ করেছে। পেহেলগাঁও হামলার পর তাৎক্ষণিক সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে ভারত। এর ফলে পাকিস্তানের তিন নদী সিন্ধু, চেনাব এবং ঝিলামের পানিপ্রবাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায় এবং গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়ে দেশটির কৃষি উৎপাদন। ভারত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার পর আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে পাকিস্তান। ৮ আগস্ট ওই মামলায় রায় দেন আদালত। এতে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি সচল করা এবং ভারতকে এই চুক্তিতে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের পর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এই নদের ভারতীয় অংশের ওপর বাঁধ নির্মাণ করা হবে। আদালত এ বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ‘ভারত যদি সিন্ধু নদের ওপর বাঁধ বা এ জাতীয় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে চায়, তাহলে অবশ্যই চুক্তির শর্ত মেনে এবং চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সেটি নির্মাণ করতে হবে।’ আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের এই রায়ের পর ভারত এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে পাকিস্তান স্বাভাবিক কারণেই স্বাগত জানিয়েছে এই রায়কে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতকে চুক্তিতে ফিরে আসার আহ্বানও জানিয়েছে।
এদিকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির ৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে এক অনুষ্ঠানে সিন্ধু নদের ওপর ভারতের বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে হুমকি দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাঁধ নির্মাণ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব। যখন শেষ হবে, ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র মেরে সেটি ধ্বংস করে দেব। সিন্ধু নদ ভারতের পারিবারিক সম্পত্তি নয়, আর আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রেরও কোনো অভাব নেই।’
ভারতকে সিন্ধু চুক্তি মানতে বললেন হেগের সালিশি আদালত : পাকিস্তানের দিকে বয়ে চলা নদীগুলোতে যে কোনো জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নকশা করার সময় ভারতকে সিন্ধু পানিচুক্তির শর্ত মেনে চলতে বলেছেন আন্তর্জাতিক একটি আদালত। আদালতের এ রায় সিন্ধু চুক্তি নিয়ে কার্যত ইসলামাবাদের অবস্থানকেই সমর্থন করছে বলে মঙ্গলবার এক ঊর্ধ্বতন পাকিস্তানি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন। এ রায় নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিচুক্তিতে পশ্চিম দিকে বয়ে চলা তিনটি নদীর পানি পাকিস্তানকে দেওয়া হয়েছে, আর পূর্ব দিকে বয়ে চলা তিনটি নদী পেয়েছে ভারত। ইসলামাবাদের আশঙ্কা, প্রতিবেশী ভারত তাদের প্রাপ্য তিনটি নদীতে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ বা সীমিত করে দিতে পারে। পাকিস্তানের কৃষি এবং জলবিদ্যুতের ৮০ শতাংশই এই তিন নদীর ওপর নির্ভরশীল। সিন্ধু চুক্তিতে পাকিস্তানকে দেওয়া নদীগুলোতে ভারতের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ছক নিয়ে ২০২৩ সালে ইসলামাবাদ হেগভিত্তিক স্থায়ী সালিশি আদালতের দ্বারস্থ হয়। -রয়টার্স ও জিও নিউজ
শুক্রবার ওই আদালত তাদের রায়ে বলেন, ভারত এই পশ্চিমের নদীগুলোতে তার ইচ্ছামতো নকশায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারে না। নকশা করতে হবে সিন্ধু চুক্তিতে থাকা শর্ত অনুযায়ী। সোমবার আদালতের ওয়েবসাইটে রায়টি প্রকাশিত হয়। এরপর মঙ্গলবার রয়টার্সকে পাকিস্তানির অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মোটাদাগে আদালত পাকিস্তানের অবস্থানকেই সমর্থন করেছে, বিশেষ করে নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নকশার ক্ষেত্রে। ‘এটা এখন পরিষ্কার, ভারত আদালতের রায় লঙ্ঘন করে এই প্রকল্পগুলোর কোনোটিই যে নির্মাণ করতে পারবে না তা আমি নিশ্চিত’, বলেছেন তিনি। ভারতকে এই তিন নদীর পানি প্রবাহিত হতে দিতে হবে, যেন পাকিস্তান তা অবাধে ব্যবহার করতে পারে, আদালতের রায়ে এমনটাই বলা হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।