ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম বন্ধ ছিল টানা ৪৩ দিন। এ সময় বহু সরকারি কর্মচারী বেতন পাননি; কেউ ছুটিতে ছিলেন, কেউ আবার বরখাস্ত হন। অবশেষে ১২ নভেম্বর রাতে শাটডাউনের সমাপ্তি ঘটেছে। তবে কতজন পুনরায় কাজে ফিরতে পারবেন, তা এখনও অনিশ্চিত।
ডেমোক্র্যাটদের দাবি পূরণের নিশ্চয়তা না মেলায় তারা সরকারি ব্যয়-বরাদ্দ বিলের পক্ষে ভোট দেন। সিনেটে বিরোধী নেতা ও নিউইয়র্কের সিনেটর চাক শ্যুমার বলেন, আমরা দাবি আদায়ে বদ্ধপরিকর ও ঐক্যবদ্ধ আছি। অন্যদিকে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ বলেন, কোনো বিনিময় ছাড়াই রিপাবলিকানদের বিল সমর্থন করা সমীচীন হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, শীঘ্রই আবারও অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে। কারণ এই সমঝোতার মেয়াদ ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। ‘ওবামা কেয়ার অ্যাক্ট’ (অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট)–এর মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হতে যাওয়ায় সেটি নবায়নের দাবিতে ডেমোক্র্যাটরা ব্যয় প্রস্তাবে সম্মতি দেননি। ফলে ১ অক্টোবর থেকে শাটডাউন শুরু হয়।
সোমবার সিনেটে ৬০–৪১ ভোটে এবং বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে ২২২–২০৯ ভোটে বিলটি পাস হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এতে স্বাক্ষর করেন। ফলে শাটডাউনের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটে। সিনেটে ৮ এবং প্রতিনিধি পরিষদে ৬ জন ডেমোক্র্যাট সদস্য অচলাবস্থা শেষ করতে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক ফেডারেল বাজেট প্রায় ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার। এর মাত্র ১০ শতাংশ নিয়েই প্রতিবছর জটিলতা তৈরি হয়, যার মধ্যে সামরিক ও জনস্বাস্থ্য খাতের ব্যয়-বরাদ্দও রয়েছে। এবারের অচলাবস্থার মূল কারণ ছিল নিম্ন ও মধ্যআয়ের নাগরিকদের চিকিৎসা সহায়তার বরাদ্দ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওবামা কেয়ার নবায়নের বিরোধিতা করেন; এতে সরকারি ভর্তুকি বন্ধ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তা তহবিল সংকুচিত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
এই দুই বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। তবে দীর্ঘ শাটডাউনের প্রভাব জনজীবনে নেতিবাচক হওয়ায় কয়েকজন ডেমোক্র্যাট শর্তসাপেক্ষে রিপাবলিকানদের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় বরাদ্দে আর কোনো বাধা নেই।
ডেমোক্র্যাট সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যরা জানিয়েছেন, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে রিপাবলিকানদের সঙ্গে ওবামা কেয়ার বিষয়ে সমঝোতা চূড়ান্ত করা হবে। তবে দলের মধ্যেই এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে, কারণ তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। ফলে আবারও শাটডাউনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ডেমোক্র্যাট নেতারা সতর্ক করেছেন— ওবামা কেয়ার নবায়ন না হলে আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে দলকে রাজনৈতিক খেসারত দিতে হতে পারে।
৪৩ দিনের শাটডাউনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৪২ মিলিয়ন আমেরিকান, যারা সরকারি খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির (ফুডস্ট্যাম্প) ওপর নির্ভরশীল। ১ নভেম্বর থেকে কর্মসূচিটি স্থগিত হয়, এবং এখন শাটডাউন শেষ হলেও কবে নাগাদ সেই অর্থ দেওয়া হবে তা নিশ্চিত নয়।
বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে ভোটাভুটিতে সমঝোতা চুক্তির পক্ষে ২২২ ভোট ও বিপক্ষে ২০৯ ভোট পড়ে। ছয়জন ডেমোক্র্যাট রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিলের পক্ষে ভোট দেন। সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়ার পর বিলটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পাঠানো হয়। স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসে তিনি এতে স্বাক্ষর করেন।
এর ফলে সরকারি খাদ্য সহায়তা পুনরায় চালু হচ্ছে, হাজার হাজার ফেডারেল কর্মীর আটকে থাকা বেতন প্রদান ও ব্যাহত বিমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল) স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার থেকেই ৪৩ দিন ধরে বেতনহীন থাকা কর্মীরা কাজে ফিরতে পারবেন। তবে সরকারি সব কার্যক্রম কবে পুরোপুরি সচল হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল