সংবিধান সংশোধন করে সেনাপ্রধানের ক্ষমতা আরও বাড়ালো পাকিস্তান। তবে ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের।
বৃহস্পতিবার জাতীয় পরিষদে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভোট পেয়ে বিলটি পাস হয়।
জানা গেছে, এই সংশোধনের মাধ্যমে পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনীরকে আজীবন দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি এখন থেকে নতুন পদ ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’র দায়িত্ব পাবেন। এতে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীও তার অধীনে থাকবে। এমনকি, দায়িত্ব শেষ হওয়ার পরও তিনি তার পদমর্যাদা বজায় রাখবেন ও আজীবন আইনি দায়মুক্তি উপভোগ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই সংশোধনীকে জাতীয় ঐক্য ও প্রাতিষ্ঠানিক সামঞ্জস্যের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সংসদে বক্তব্যে তিনি বলেন, আজ আমরা সংবিধানে যেটা যুক্ত করেছি, সেটা শুধু ফিল্ড মার্শালের বিষয় নয়; এতে বিমান ও নৌবাহিনীকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তাতে দোষের কী আছে?
তিনি আরও বলেন, জাতি তাদের নায়কদের সম্মান জানাতে জানে। আমরাও জানি কীভাবে সেই সম্মান অর্জন করতে হয়।
বৃহস্পতিবার জাতীয় পরিষদের মাত্র চারজন সংসদ সদস্য এই বিলের বিপক্ষে ভোট দেন। এর আগে সোমবার সিনেটও বিরোধী দলের বয়কটের মধ্যেই বিলটি অনুমোদন করে।
সাধারণত সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আইন পাসে সপ্তাহ বা মাস লাগে, কিন্তু এবারের সিদ্ধান্ত এসেছে অস্বাভাবিক দ্রুততায়।
জানা গেছে, এরই মধ্যে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারিও বিলটিতে স্বাক্ষর করেছেন। ফলে বিলটি ইতোমধ্যে আইনে পরিণত হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে নতুন আদালতে ক্ষমতা স্থানান্তর
নতুন সংশোধনীর আওতায় সাংবিধানিক মামলাগুলো এখন থেকে সুপ্রিম কোর্ট নয়, বরং সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়ে গঠিত নতুন কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালতে বিচার হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুপ্রিম কোর্ট সরকারবিরোধী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রীদেরও ক্ষমতাচ্যুত করেছে।
বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এই ভোটে অংশ না নিয়ে সংসদ থেকে বেরিয়ে যায়। দলটির সংসদ সদস্যরা বিলের কপি ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান। তারা অভিযোগ করেন, কোনও ধরনের পরামর্শ ছাড়াই সরকার এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পিটিআই মুখপাত্র জুলফিকার বুখারি বলেন, সংসদে কেউই গণতন্ত্র বা বিচারব্যবস্থার ধ্বংস নিয়ে মাথা ঘামায়নি। তারা চুপচাপ বসে থেকেছে, যখন দেশকে একটি ‘ব্যানানা রিপাবলিক’ এ পরিণত করা হচ্ছে। পাকিস্তানের সংবিধান এখন শান্তিতে ঘুমাক।
‘বিচার বিভাগের মৃত্যু ঘণ্টা’
পাকিস্তানের আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই সংশোধন বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে গভীর সংকটে ফেলবে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ আসাদ রহিম খান বলেন, আমরা এমন এক অজানা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, যা প্রায় এক শতাব্দীতে দেখা যায়নি। আজ যারা একে অপরকে অভিনন্দন দিচ্ছে, তারাই একদিন এই আদালতের দ্বারস্থ হবে যে আদালতকে তারা নিজেরাই ধ্বংস করেছে।
আরেক সংবিধানবিদ মির্জা মইজ বেগ বলেন, এই সংশোধন ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থার মৃত্যু ঘণ্টা’। কারণ এতে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট নতুন সাংবিধানিক আদালতে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারক নিয়োগের পূর্ণ ক্ষমতা পাবেন। এতে সরকারের ওপর আদালতের নজরদারির ক্ষমতা কার্যত হারিয়ে যাবে। সূত্র: ডন নিউজ, জিও টিভি, রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/একেএ