২, ৪ এবং ৭ বছর বয়েসী তিন ইউএস সিটিজেনকেও লুইঝিয়ানা স্টেট থেকে গ্রেফতারের পরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিস্কারের ঘটনায় হতভম্ব সাধারণ আমেরিকানরা। অবৈধভাবে বসবাসরতদের মধ্যে যারা অপরাধে লিপ্ত অথবা আদালত কর্তৃক দণ্ডিত কিংবা ইমিগ্রেশন কোর্টের নির্দেশ অবজ্ঞা করেছে শুধুমাত্র তাদেরকেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিস্কারের অঙ্গিকার করা হলেও ২০ জানুয়ারির পর অনেক সিটিজেন, গ্রীণকার্ডধারীও বহিস্কারের শিকার হয়েছেন। তেমন অমানবিক ও বেআইনী পদক্ষেপের বলি হলো এবার ৩ শিশু-সিটিজেনও।
এই শিশুর দুই মা ছিলেন অবৈধ অভিবাসী। তাদের সাথেই ওদেরকেও বহিষ্কার করা হয় শুক্রবার ভোর রাতে। এরমধ্যে ৪ বছর বয়েসী শিশুটি ছিল ক্যান্সারে আক্রান্ত। চতুর্থ স্টেজের ক্যান্সারের এই শিশুকে লুইঝিয়ানা থেকে হন্ডুরাসের উদ্দেশ্যে বহিষ্কারের সময় ওষুধ গ্রহণের অনুমতিও দেয়া হয়নি বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
লুইঝিয়ানাস্থ আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের নির্বাহী পরিচালক এলানাহ ওডোমস এ প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধচিত্তে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনদেরকে এভাবে বহিস্কারের মধ্যদিয়ে সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করার ঘটনা ঘটছে-যা কল্পনারও অতীত। বিশেষ করে গুরুতর রোগে আক্রান্তরাও ট্রাম্পের ধর-পাকড়ের শিকার হচ্ছে। এলানাহ ওডোমস উল্লেখ করেন, আইসের এজেন্টরা এভাবে কতজন সিটিজেনকে গ্রেফতারের পর বহিষ্কার করেছে সে তথ্য সরকারীভাবে জানানো না হলেও ভিকটিমদের আইনজীবীরা বলেছেন, ২০০৩ সালে আইস (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এ্যানফোর্সমেন্ট) নামক সংস্থাটি গঠনের পর হাজারো ইউএস সিটিজেন ফেডারেল সরকারের নির্বিচার-নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হয়েছেন। দুই বছর বয়েসী এক কন্যা সিটিজেনকে গ্রেফতারের পরই বৃহস্প্রতিবার অপরাহ্নে ওয়েস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব লুইঝিয়ানা কোর্টে আবেদন জানানো হয়। পরদিন শুক্রবার আদালতের কার্যক্রম শুরুর আগেই শিশুটিকে বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে বলে তার আইনজীবী গ্র্যাসি উইলস উল্লেখ করেছেন।
আইনজীবীরা আরো জানান, শুক্রবার সকালে ঐ কোর্টের জজ টেরি এ ডোউটি শিশুটিকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু ততক্ষণে ট্রাম্প প্রশাসনের বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা অতিক্রম করেছে হন্ডুরাসের পথে। জজ ইউএস সিটিজেনকে বহিষ্কারের অমানবিক ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত শুনানীর জন্য ১৬ মে তারিখ ঘোষণা করেছেন।
এমন নির্দয় আচরণ প্রসঙ্গে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ত্রিসিয়া ম্যাকলোলিন বলেন, অবৈধভাবে বসবাসরত মায়েরা সবসময়ই সিটিজেন শিশুদের সাথে নিয়েই বহিষ্কার হতে চান। ঐ ৩ শিশুর মায়েরাও একই আবেদন জানিয়েছিলেন বলেই আইসের এজেন্টরা সিটিজেন শিশুদেরকেও বহিষ্কার করেছে। ত্রিসিয়া ম্যাকলোলিনের এমন বক্তব্য সঠিক বলে মনে করেন না এটর্নী গ্র্যাসি উইলস।
এদিকে নির্বিচার গ্রেফতার ও বহিষ্কারের অংশ হিসেবে গত বৃহস্প্রতিবার পর্যন্ত ৪ দিনে ফ্লোরিডার বিভিন্ন স্থান থেকে ৭৮০ জনকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। আইসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইমিগ্রেশন কোর্ট থেকে বহিস্কারের নির্দেশপ্রাপ্তদেরকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মাত্র ২৭৫ জনের বিরুদ্ধে বহিস্কারের নির্দেশ জারি ছিল বলে এটর্নীরা উল্লেখ করেছেন। ফ্লোরিডা স্টেটের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় আইসের এই অভিযানে সমগ্র কম্যুনিটি সন্ত্রস্ত।
অপরদিকে, ট্রাম্পের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী ক্রিস্টি নয়েম আবারো বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং আমার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে যারা বেআইনীভাবে বাস করছেন তারা দ্রুত নিজ দেশে চলে যান। যদি স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ না করে তাহলে আমরা তাদেরকে ধরবো এবং বহিষ্কার করবোই।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল