চট্টগ্রাম মহানগরের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে এখন অন্যতম প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। এই সমস্যা সমাধানে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাল-নালায় প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য জমা হয়, সেটাই জলাবদ্ধতাকে আরও ত্বরান্বিত করছে। ফলে জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি প্রকল্প চলমান থাকলেও এর আশানুরূপ সুফল মিলছে না। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম নগরে দৈনিক বর্জ্য উৎপাদন হয় প্রায় তিন হাজার টন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) প্রায় দুই হাজার টন বর্জ্য সংগ্রহ করে। বাকি ১০ হাজার টন বর্জ্যরে মধ্যে কিছু খাল-নালা হয়ে নদীতে পড়ে এবং বাকি বর্জ্য খাল-নালা-নর্দমায় আটকে থাকে। নালা-নর্দমা পরিণত হয় বর্জ্যরে ভাগাড়ে। পরিষ্কার করা খালে ফের ফেলা হয় বর্জ্য। বর্জ্যইে প্রকল্পের সুফল আটকা। বর্তমানে জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনটি সংস্থা সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
ওই গবেষণা প্রবন্ধে আরও বলা হয়, নগরে দৈনিক ২৪৯ টন প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে সংগৃহীত হয় ১০৯ টন, সংগ্রহ হয় না ১৪০ টন। বর্জ্যরে মধ্যে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, ২৪৯ টনই হচ্ছে প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্য। এর মধ্যে সংগ্রহ করা হয় ১০৯ টন। বাকি পলিথিন-প্লাস্টিক অসংগৃহীত থেকে যায়। ২০৫১ সালের মধ্যে প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্যরে পরিমাণ দাঁড়াবে ৪২৮ টনে। প্লাস্টিক-পলিথিনের ফলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা, বায়ুদূষণ, মাটিদূষণ, কর্ণফুলী নদীতে প্লাস্টিক-পলিথিনের স্তর পড়ে যাচ্ছে। নগরীর জলাবদ্ধতার আকার তীব্রতর হওয়ার প্রধান কারণ বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনা। চসিকের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে অন্যতম প্রধান অন্তরায় বর্জ্য। বর্জ্যরে কারণেই জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্পের আশানুরূপ সুফল মিলছে না। তাই আমরা বর্জ্যকে একটা শৃঙ্খলায় আনার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে নগরবাসীর সহায়তা বেশি জরুরি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশল মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, নগরের বর্জ্য অপসারণে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না আসলে প্রকল্পগুলোর কাক্সিক্ষত সুফল মিলবে না। কারণ চসিকের সংগ্রহকৃত বর্জ্যরে বাইরের বর্জ্যগুলো কোথায় যায়। কার্যত এগুলো খাল-নালায় আটকে থাকে। ফলে জলাবদ্ধতা হয়। সিডিএর মেগা প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মো. ফেরদৌস আহমেদ বলেন, প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খাল সংস্কার-উন্নয়নের কাজ চলছে। এর মধ্যে শেষ হওয়া খালগুলোতে আবারও বর্জ্য পড়ে নাকাল অবস্থা। আজ পরিষ্কার করলে কদিন পর আবারও বর্জ্যে ভরপুর হচ্ছে। এর থেকে উত্তরণ না হলে প্রকল্পের সুফল মেলা খুবই কঠিন হবে।