ম্যাচটা শেষ হতেই দর্শকরা হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লেন মাঠে। শুরুর দিকে তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিয়োজিতরা। তবে সংখ্যাটা এতই বেশি, পরে আর বাধা দেওয়া সম্ভব হয়নি। বসুন্ধরা কিংস চ্যালেঞ্জ কাপের ট্রফি নিতে মঞ্চে উঠলে হাজার হাজার দর্শক তাদের ঘিরে ধরেন। এক পাশে বাদকেরা বাজাতে শুরু করেন ব্যান্ড। বাদ্যের তালে তালে দর্শকরা উৎসব করলেন বসুন্ধরা কিংসের জয়। ফুটবলারদের সঙ্গে ছবি তুললেন। জড়িয়ে ধরলেন। জানালেন নিজেদের ভালোবাসার কথা। কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে মোহামেডানকে ৪-১ গোলে হারিয়ে দারুণ এক উৎসব করল বসুন্ধরা কিংস।
আর্জেন্টাইন কোচ মারিও গোমেজ অভিষেকটা উদ্যাপন করলেন শিরোপা দিয়ে। ফুটবলার ও দর্শকদের সঙ্গে উদ্যাপনের ফাঁকে বললেন, ‘এটা অসাধারণ অনুভূতি। ফুটবলারদের নিয়ে আমি দারুণ খুশি। এ জয় তাদের জন্যই সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে ১০ জন নিয়ে খেলেছে। মনে হয়েছে যেন ১১ জনই খেলছে। এটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য খুবই ভালো একটা ব্যাপার।’ বসুন্ধরা কিংস-মোহামেডান ১-১ সমতায় থাকাবস্থায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন সোহেল রানা। এরপর কিংস আরও ভয়ংকর রূপে মোহামেডানের ডিফেন্স লাইনে আক্রমণ করে। কিংসের প্রথম গোলটি করেন ডরিয়েলটন, পেনাল্টি থেকে। এরপর মোহামেডানের মুজাফফরভ পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি সাদা-কালোদের। ৭২ মিনিটে রাফায়েল, ৭৫ মিনিটে সানডে এবং ৮৬ মিনিটে ডরিয়েলটন গোল করলে কিংসের ৪-১ ব্যবধানের জয় নিশ্চিত হয়। এমন এক জয়ের পর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন কোচ মারিও গোমেজ। তিনি বলছেন, ‘আমাদেরও আরও ভালো করার সুযোগ আছে।’ ম্যাচে দুই গোল করা ডরিয়েলটন বলেন, ‘আমি এই জয়ের জন্য দারুণ আনন্দিত। কেবল নিজের জন্য নয়, পুরো দলটার জন্যই আনন্দিত। সবাই খুবই ভালো খেলেছে। আমি গোল করেছি ঠিকই। তবে জয়টা এসেছে সবার ভালো পারফরম্যান্সের জন্যই।’ এমানুয়েল সানডে বললেন, ‘সমর্থকদের একটা ট্রফি উপহার দিয়েই আমরা মৌসুমটা শুরু করেছি। এটা সত্যিই আনন্দের ব্যাপার। এটা আমাদের সামনের টুর্নামেন্টগুলোতে ভালো করতে প্রেরণা জুগাবে।’
বসুন্ধরা কিংস কুমিল্লা থেকে ট্রফি নিয়ে ফিরেছে। দলের মধ্যে আছে ফুরফুরে আমেজ। তবে এই ম্যাচটা শুরু করার আগেই ছিল অনেক নাটকীয়তা। ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা ছিল আড়াইটায়। সেই ম্যাচ শুরু হয় ১১ মিনিট পর। মাঠের ঘাস কাটাই শেষ হয় ম্যাচ শুরুর কিছুক্ষণ আগে। ডি বক্স, পেনাল্টি বক্স আর সেন্টার সার্কেলোর মার্কিংয়ের কাজও শেষ একেবারে শেষ মুহূর্তে। প্রচণ্ড রোদে উত্তপ্ত মাঠে খেলতে নেমে ফুটবলাররা ঘেয়ে-নেয়ে একাকার। লম্বা ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে ছিল নানান ফাঁদ। থোক থোক কাদার মধ্যে প্রায়ই পিছলে পড়েছেন ফুটবলাররা। লম্বা ঘাসে মাঝেমধ্যেই আটকে যায় ফুটবলের গতি। এমন এক মাঠেও নিজ দলের সমর্থকদের মন ভরিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। অন্যদিকে ক্ষিপ্ত মোহামেডানের সমর্থকরা বোতল ছুড়েছেন মাঠে। নিক্ষেপ করেছেন স্মোক ফ্লেয়ার। এ কারণে খেলাও বন্ধ ছিল প্রায় ছয় মিনিট।
মৌসুমের শুরুতে গতবারও চ্যালেঞ্জ কাপ জয় করেছিল বসুন্ধরা কিংস। হারিয়েছিল এই মোহামেডানকেই। সেবার কিংস অ্যারিনায় জয় পেয়েছিল ২-১ গোলে। এবার মোহামেডানের মাঠে কিংস জিতল ৪-১ ব্যবধানে। কিংসের অধিনায়ক তপু বর্মণ বলেছিলেন, এবার ঘরোয়া ফুটবলের পাঁচ শিরোপাতেই চোখ তাদের। প্রথমটি জিতে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন তপু। এবার আরও চারটি শিরোপা জয়ের অপেক্ষা!